এ আর হানিফঃ
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হেলেঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মেরামত কাজ করার আগেই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ নিজামুল হক বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত কাজে নয়ছয় করে বরাদ্দের টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এমনকি বিদ্যালয়ের ভবন মেরামত না করেই খসে পড়া প্লাস্টারের উপরে নামেমাত্র রং করা হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বরাদ্দের টাকা থেকে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামেমাত্র রঙের কাজ করাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪) থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে হেলেঞ্চা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়।এসব বরাদ্দের টাকা বিদ্যালয়ের সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের যৌথ অ্যাকাউন্টে দেওয়ার নিময় থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুধু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে বরাদ্দের টাকা দিয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা, মেঝে, ওয়াল, সিঁড়ি, ছাদ, রংকরণ ও গ্রিল মেরামত কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কাজের অনুসন্ধানে ধরা পরেছে উল্টো চিত্র।
জানা যায়, উপজেলার গারুরিয়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ টাকা। ওই বিদ্যালয়ের ভবনের মেরামত কাজ না করেই বিলের পুরা টাকাই উত্তোলন করা হয়েছে। বিলের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি সাংবাদিকরা টের পেলে প্রধান শিক্ষক তড়িগড়ি করে ভবনের খসেপড়া প্লাস্টারের উপরে নামেমাত্র রংয়ের কাজ করায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নিজামুল হক মেরামত কাজ না করে কিভাবে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করলেন এনিয়ে তারা চিন্তিত। তারা আরও জানান, বিলের টাকা উত্তোলনের খবরটি এলাকায় চাউর হলে তিনি মেরামতের কাজে নয়ছয় করে বরাদ্দের টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা লোপাট করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নিজামুল হক বলেন, কাজে তেমন কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কাজে মাত্র দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অফিসের টাকা কেটে তিনি ১ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান। এ টাকা দিয়ে তেমন আর কি কাজ করা যায়। ভবনের মেরামত কাজ না করেই তিনি কি করে বিলের টাকা উত্তোলন করলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা বলছেন, তাদের ধারণা বিদ্যালয়ের ভবনের রং করা বাবদ ৫০ হাজার টাকার কাজ করা হয়েছে। আর খাতা-কলমে নানা কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের বাকি অর্থ লোপাট করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে তা থেকে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ পরিদর্শন এবং সঠিকভাবে তদারকি না করেই কাজের সম্পূর্ণ বিল দিয়ে দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতের কাজে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হবেনা। সঠিকভাবেই ক্ষুদ্র মেরামত কাজে বরাদ্দ অর্থ দিয়ে কাজ করতে হবে। ভবনের মেরামত কাজ করার আগে কি করে প্রধান শিক্ষক বিলের অর্থ উত্তোলন করেছেন তিনি এ বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।হেলেঞ্চা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত কাজে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজে পেলে সে বিষয়েও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন।