নিজস্ব প্রতিবেদক:সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে চলতি অর্থবছরের শেষে মূল্যস্ফীতি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
রোববার (৫ মে) জাতীয় সংসদের বৈঠকে ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করতে গিয়ে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের নির্ধারিত অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার গত বছর থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সারা বিশ্বে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ দেখা যায়, যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির চাপ প্রকট হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত শক্ত অবস্থানে ফিরে আসা, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জন সম্ভব হবে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ওয়াসিকা আয়শা খান।
তিনি আরও বলেন, সরকার এরইমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুব দ্রুত শক্ত অবস্থানে ফিরে আসবে।
সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব আয়, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়, ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহের মতো মৌলিক অর্থনৈতিক চলকগুলো সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে আমদানি ব্যয় নেতিবাচক। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হবে বলে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামী জুলাই থেকে কাস্টমস আইন-২০২৩ বাস্তবায়ন শুরু হবে। এছাড়া দশ লাখ বা তার বেশি টাকার মূল্য সংযোজন কর(মূসক) পরিশোধে ই-পেমেন্ট বা এ চালান ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।
এছাড়া উৎসে কর কাটার জন্য ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের ব্যবস্থা করা করা হবে। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) এবং সেলস ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন বসানোর কার্যক্রম চলছে। থার্ড পার্টির মাধ্যমে এ কাজ দ্রুত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নতুন করদাতা সনাক্তকরণ, মিডিয়াম অ্যান্ড লং টার্ম রেভিনিউ স্ট্রাটেজি প্রনয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানানো হয়েছে। এতে অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে বলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী মনে করেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে কর রাজস্ব ১৩.৯ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ , যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ডিসেম্বর শেষে রপ্তানি আয় দাড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শুন্য ৮৪ শতাংশ বেশি।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে। বিলাসদ্রব্যের আমদানি পরিশোধ করা এবং মিতব্যয়িতার কারণে আমদানি কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে প্রবাস আয় এসেছে ১০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে কোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য ভূরাজনৈতিক কারনে বৈশ্বিক অর্তনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।