আব্দুস সবুর তানোর থেকে:সমিতির নামে বিল লীজ নিয়ে ক্ষমতার দাপটে একক ভাবে মাছ চাষ করে কোটিপতি বনে গেছেন অভয় নামের একব্যাক্তি। রাজশাহীর তানোর উপজেলার সীমান্তবর্তী টি বাঁধের পূর্ব দিকে মোহনপুর সীমানায় বিল মাইলে ঘটে রয়েছে এমন ঘটনা। উন্মুক্ত বিল হলেও এমপির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়া বিলটি দখল করে মাছ শেষ করে থাকেন মেলান্দী গ্রামের অভয়সহ কয়েকজন ব্যক্তিরা। তারা এমপি আয়েন উদ্দিনের মাধ্যমে বিলটি লীজ নিয়ে জেলেদের মাছ ধরতে দিতেন না। এখানেই শেষ না চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টির কারনে ধান সবজি ঢুবে গেলেও পানি বের করতে দেননি সমিতির নামে ক্ষমতার দাপট ধারী এমপি আয়েন উদ্দিনের ভাই ঘাষিগ্রাম ইউনিয়ন ইউপির চেয়ারম্যান বাবলু, অভয় ও বিজয় এবং মোজাহার। উন্মুক্ত বিল হলেও ক্ষমতার জোরে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করে কোটিপতি বনে গেছেন তারা। ফলে বিলটি উন্মুক্ত করা হলে স্থানীয় জেলেরা মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।
মেলান্দী মৎস্য জীবি সমবায় সমিতির সভাপতি অভয় জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বিগত ২০১৫ সালে সমিতির নামে লীজ নেয়া হয়। প্রতি বছর লীজ নবায়ন করতে হয়। এমপি ছাড়া লীজ নেয়া যেত না। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন এমপি প্রয়াত মেরাজ মোল্লার লোকজন লীজ নিয়েছিলেন । অনেক কষ্ট করার পর সমিতির নামে লীজ হয়। সমিতির সদস্য সংখ্যা ৭২ জন। প্রতি বছরে কোটি টাকার উপরে মাছ বিক্রি করা হয়। কত টাকায় লীজ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান এসব জেনে কি লাভ। সমিতির নাম করে আপনারা কয়েকজন মাছ চাষ করছেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদ উত্তর দেন নি।
সমিতির অন্য সদস্যরা জানান, সমিতির নামে কিভাবে লীজ নেই আমরা কিছুই জানিনা। অভয় সাব জানিয়ে দেন আমরা লীজ নিয়েছি, আমরাই চাষ করছি। এখানে সমিতির কোন যোগ নেই। অভয় সমিতির সভাপতি তার উপরে আমরা কথা বলতে পারিনা। কেউ প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। এজন্য তার ভয়ে সমিতির সদস্যরা কেউ কিছু বলেনা। তাছাড়া কোন দিন বিলের মাছ বিক্রি লাভের অংশও কেউ দেখতে পায়না। বিল চাষ করে ভাগ্য বদল হয়েছে অভয়সহ কয়েকজনের। সমিতির তিল পরিমান লাভ হয়নি।
স্থানীয় মৎস্য জীবিরা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিল মাইল নামের বিলটি ক্ষমতাসীনদের কব্জায় চলে যায়। ক্ষমতায় আসার আগে বিল ছিল উন্মুক্ত। বিলে মাছ আহরণ করে কয়েক শো পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সেটা আর হয় না। বিলের কাট মাছের দেখা মিলেনা। বিলে বেশির ভাগ জমি ব্যক্তি মালিকানা। বিলে খুব বেশি হলে ১০০ বিঘা খাস জমি আছে। অথচ টি বাধের বা মাইল বিলের পশ্চিমে তানোরের সীমানায় বিল কুমারি নামের বিল রয়েছে। বিলটি কখনো লীজ হয় না। শতশত মৎস্য জীবি পরিবার মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগযুগ ধরে। সরকারের পর্যাপ্ত জমিও রয়েছে, তারপরও উন্মুক্ত। তাহলে বিল মাইল, পার্শ্বে ডুবি বিল কিভাবে লীজ হয় এমন নানা প্রশ্ন স্থানীয় মৎস্য জীবিদের।
জানা গেছে, বিলটিতে ৩০০ বিঘা সরকারী জমি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে ভুলভাল বুঝিয়ে লীজ নিয়ে দেদারসে বছরের পর বছর মাছ চাষ করে আসছেন এমপি আয়েনের হাতে গোনা কয়েকজন অনুগত।
বিলপাড়ের কৃষকরা জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে কয়েকদিন ভারি বর্ষন হয়। বর্ষনের কারনে ধান ও সবজি ডুবে ছিল। কিন্তু বিল থেকে পানি নামার সুযোগ ছিল। কিন্তু বিলে মাছ আছে এমন দোহায়ে পানি বের করতে দেয়নি চাষ করা ব্যক্তিরা। আবার বোরো মৌসুমে বীজতলা ও ধান রোপনের সময় বিলে পানি থাকার কারনে সময় মত কিছুই করা যায় না। বিলটি জরুরি ভিত্তিতে উন্মুক্ত করা হোক। তাহলে কৃষক ও মৎস্য জীবিদের প্রচুর উপকার হবে, বাঁচবে শতশত পরিবার।
বিল লীজ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি মিথিলা দাসের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০ একরের ঊর্ধ্বে হলে জেলা থেকে লীজ হয়। এটা জেলার কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
লীজ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিসুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখার পর বলা যাবে।