খবর প্রতিদিন ২৪ডেস্ক :নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ মানবাধিকার কর্মীদের ভয়ভীতিপ্রদর্শন ও আইনি হয়রানি করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে জন্য পরিচিত এবং সম্মানিত নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকারের’ দুই নেতাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের হয়রানি নিয়ে কমিশন খুবই উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ ও সুরক্ষায় মানবাধিকার কর্মী এবং অন্যান্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির কাজের নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।’
এতে আরও বলা হয়, ইউনূস প্রায় এক দশক ধরে হয়রানি ও ভয়ভীতির কবলে রয়েছেন। তিনি দুই মামলায় বিচারাধীন রয়েছেন। এই বিচারে তাঁর কারাদণ্ডও হতে পারে। দুটি মামলার মধ্যে একটি শ্রম আইন লঙ্ঘনের ও অপরটি দুর্নীতির অভিযোগ।
‘ড. ইউনূস আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে, বিশেষ করে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকিসহ শ্রম আইনে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর দাবির একটি মামলা চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও হেরে গেছেন ইউনূস। এর মধ্যে ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৮ টাকা কর পরিশোধও করেছেন তিনি।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে নতুন করে ১৮টি মামলা হয়।
ওই ঘটনায় নোবেলজয়ীসহ বিশ্বের শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিচারের নামে হয়রানি না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠি ও বিবৃতি দিয়েছেন। চিঠিটির শুরুতেই অবশ্য দেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানও জানানো হয়।
বিবৃতিতে রাভিনা শামদাসানি আরও বলেন, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নেতা আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এগুলোর রায় আগামী বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করা হবে। ১০ বছর আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ করা হয়েছে। উভয়কেই হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও নবায়ন করতে দেওয়া হয়নি।
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। ওই সমাবেশে রাত্রিযাপনের ঘোষণা ছিল সংগঠনটির নেতাদের। তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য মতে, সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি।
শাপলা চত্বরে ওই ঘটনায় গুলশান থানার মামলায় ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় এই দুই আসামি জামিনে আছেন।
নাগরিক সমাজের নেতারা, মানবাধিকার রক্ষক এবং অন্য ভিন্নমতালম্বীদের আইনি হয়রানি বাংলাদেশের নাগরিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক লক্ষণ। এসব মামলা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে বড় পরীক্ষা।
বিবাদী পক্ষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এসব মামলা যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিচালনা ও কঠোর পর্যালোচনা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আপত্তিকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের বিষয়টিও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নতুন আইনে কারাদণ্ডের বদলে জরিমানার বিধান করা হচ্ছে ও জামিনের সুযোগ বাড়াবে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে এই আইনের অপব্যবহার রোধের বিষয়টিও সংসদকে বিবেচনায় নিতে হবে।