মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃমেহেরপুর সদর উপজেলার উজ্জলপুর ভৈরব নদীতে প্রায় কোটি টাকার ব্রিজ নির্মান কাজ অর্ধেক শেষ না হতেই দির্ঘদিন কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রত্যাশিত ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় পঁচে যাওয়া কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী । স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বলছেন , কাজ চলমান রয়েছে। কাজ ফেলে পালানোর কোন সুযোগ নেই, চুক্তি অনুয়াযী ঠিকাদারকে কাজ করতে হবে।
জানাগেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার উজ্জলপুর কৃষি ব্যাংক হতে উজ্জলপুর চক সড়কে একটি পিএসসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ খ্রিস্টাব্দে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইইডি) বাস্তবায়নে ব্রিজ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান ফরিদপুরের কামার জানি সুমন(জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের জুন মাসে ব্রিজটি নির্মাণ শেষ হবার কথা থাকলেও অদ্যবধি কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেক। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা সমালোচনা আর হতাশা। সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের ভৈরব নদীর ওপর গার্ডার ব্রিজ অসমাপ্ত কাজ পড়ে রয়েছে। ভৈরব নদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মরচে ধরা রডে অর্ধনির্মিত ব্রিজ। নদীর দুই পাড়ে ব্রিজের সাথে নেই সংযোগ সড়ক। ফলে দীর্ঘদিনের পুরাতন পঁচা কাঠ ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনরে ঝুকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন নারী, শিশু বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের হাজারও মানুষ। উজলপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, ব্রিজটি নির্মাণকালে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স কামার জানি সুমন’ সেতু নির্মাণে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার শুরু করে। সিডিউল বহির্ভ্ধসঢ়;ূত কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামবাসী। ফলে ঠিকাদার কাজ গুছিয়ে নিয়ে চলে যায়। অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে কাজ।
ওই গ্রামের চমৎকার আলী জানান, ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন ব্রীজটির কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কাজ অর্ধেক করেই বছর খানেক আগে ঠিকাদার তাদের শ্রমিক নিয়ে চলে গেছে। ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় জীবনের ঝঁকি নিয়ে ভৈরব নদীর দু’পারের কৃষিপন্য আনা নেয়া করতে হচ্ছে। দ্রত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দাবী জানান তিনি। উজলপুর কৃষি ব্যাংক পাড়ার সাহেদা বেগম জানান, গ্রামের সব মানুষের আবাদ রয়েছে নদীর ওপারে। তাছাড়া তাদের ছেলে মেয়েরাও স্কুল কলেজে লেখাপাড়া করতে এপারে আসতে হয়। আমরা খুব ভয়ে ভয়ে সাঁকো পার হতে হয়। অনেক সময অনেক মানুষ পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ দুর্ভোগ দেখবে কে? এমন প্রশ্ন তার।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯৭৫ মিটার চেইনেজে ৯৬.১০ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। তবে কাজ কেন বন্ধ তার কোন জবাব মেলেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে। ব্রিজ নির্মাণ কাজের মালামাল পাহারার দায়ীত্বে থাকা উজ্জলপুরের মো. গরিবল্লাহ জানান, মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে তিনি দেখভালের দায়ীত্ব পালন করছেন। সাত মাস কোন বেতন পাননি। ঠিকেদারি প্রতিষ্ঠান ওই সময় থেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। যে মাালামাল পড়ে আছে তা বিক্রি করলে দুই মাসের বেতন হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কেউ না থাকায় কাজও ছাড়তে পারছেনা আবার বেতনও পাচ্ছেন না।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সেলিম রেজা বলেন, দির্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ আছে। এতে এলাকার মানুষ পড়েছে নানা ভোগান্তিতে। বিষয়টি নিয়ে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের আসস্ত করেছেন দ্রুত সময়ে আবার কাজ শুরু হবে।
মেহেরপুর সদরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডির) প্রকৌশলী মো. সাব্বির উল ইসলাম জানান, কাজ চলমান। প্রকল্পের মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে। উক্ত ঠিাকাদার চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করবেন। কাজ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।