মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী ও তাদের গডফাদারের চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে দিনদিন বেড়েই চলেছে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে, চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে আবারো এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার নাম-সুমন মিয়া (১৮)। সে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা পশ্চিমপাড় গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে। আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বালিয়াঘাট সীমান্তের ১১৯৭নং পিলার সংলগ্ন ভারতের সীমানায় এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১টার পর থেকে বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা, লালঘাট এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী লেংড়া জামাল, রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, হযরত আলী, আনোয়ার হোসেন বাবলু, খোকন মিয়া, রুবেল মিয়াগং, টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া, রজনীলাইন, বড়ছড়া, চুনাপাথর খনি প্রকল্প, লাকমা, লালঘাট এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, মোক্তার মহলদার, আক্কাছ আলী, নেকবর আলী, রুস্তম মিয়া, মনতাজ মিয়া, নাসির মিয়াগং ও চাঁনপুর- লাউড়গড় সীমান্তের নয়াছড়া, রাজাই, গারোঘাট, কড়ইগড়া, বারেকটিলা,
যাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী জসিম মিয়া, বায়েজিদ মিয়া, রফিকুল, আবু বক্করগং পৃথক ভাবে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, কসমেটিস, গরু ও কাঠসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জ ও ভৈরব পাঠানোসহ সীমান্তের লাউড়গড়, বড়ছড়া ও চারাগাঁও এলাকার বিভিন্ন স্থানে কয়লা ও পাথর মজুত করা শুরু হয়। এমতাবস্থায় আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টার সময় কয়লা পাচাঁরের সময় বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা পশ্চিমপাড় এলাকার ভারত সীমান্তের চোরাই কয়লার গুহার ভিতরে মাটি চাপা পড়ে কিশোর সুমন মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে তার সাথে থাকা অন্য কয়লা পাচাঁরকারীরা মাটি খুড়ে ওই কিশোরকে গুহার ভিতর থেকে উদ্ধার করে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের অভ্যান্তরে নিয়ে আসে। এর আগে গত ৫ই আগস্ট (শনিবার) দুপুরে এই সীমান্তের লাকমা পূর্বপাড়া এলাকার ভারত সীমান্তের চোরাই কয়লার গুহায় পাথর চাপা পড়ে আক্তার হোসেন(১৬) নামের আরো এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এছাড়াও গত ৩আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোরে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম(৩৫) ও গত ২৯সেপ্টেম্ভর (শুক্রবার) ভোরে কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে শ্রমিক কাছম আলী(৬০) এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গত
৮ অক্টোবর (রবিবার) রাত ১২টায় চারাগাঁও সীমান্তে গডফাদার তোতলা আজাদের সোর্স রফ মিয়া ও চোরাই কয়লা ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাচাঁরকৃত কয়লা থেকে চাঁদা উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে ৫জন আহত হয়। এরআগে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি নিয়ে আরো একাধিক বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। তারপরও সোর্স ও তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি দিনদিন আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এব্যাপারে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী কালাম মিয়া বলেন- কয়লা আনতে গিয়ে একজন লোক মারা গেছে জানতে পারছি। আমি অসুস্থ, আমার দায়িত্ব হোসেন আলী পালন করছে। সোর্স হোসেন আলী বলেন- বিজিবির দায়িত্বে সোর্স কালাম আর তোতলা আজাদ ভাইয়ের দায়িত্বে রতন মহলদার ও কামরুল। আমি সোর্স কালামের কাজ করি, ভারত থেকে চোরাই কয়লার বস্তা কয়টা পাচাঁর হয় তা গুনে রাখি। তার বিনিময়ে কালাম আমাকে ১হাজার টাকা রোজ দেয়। চোরাচালান ও চাঁদাবাজি তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে ১জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহববুর রহমানের সরকারী মোবাইল নাম্বারে কল করার পর তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।