মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে আবারো এক বৃদ্ধ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার নাম- কাছম আলী (৬০)। তিনি জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাহারাম-গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা। আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্ভর) সাড়ে ৭টায় সীমান্তের যাদুকাটা নদী থেকে ওই বৃদ্ধ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- চোরাচালান ও চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৩শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে, প্রতিদিনের মতো আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্ভব) ভোরে প্রায় ৫শতাধিক শ্রমিককে বারকি নৌকা দিয়ে যাদুকাটা নদীপথে ভারতের অভ্যন্তরে পাঠায় কয়লা, পাথর ও বালি আনার জন্য। ওই সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শ্রমিকদের তাড়া করে। তখন শ্রমিকরা তাদের নৌকা ও মালামাল নিয়ে পালানোর সময় যাদুকাটা নদীতে ডুবে বৃদ্ধ কাছম আলী নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পর ওই শ্রমিকের মৃতদেহ পর্যটন স্পর্ট বারেকটিলা সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর তীরে ভেসে আসলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। গত দুইদিন আগে একই ভাবে কয়লা, পাথর ও বালি পাচাঁর করার সময় বিএসএফ সদস্যরা নৌকা আটক করে নিয়ে যায়। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) ভোরে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে পাথর পাচাঁরের সময় নৌকা ডুবে আব্দুল হাসিম (৩৫) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আর আগে গত শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমাছড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে গর্তে পড়ে আক্তার হোসেন (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর, চারাগাঁও, বালিয়াঘাট, টেকেরঘাট, চাঁনপুর ও লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে গিয়ে নদীতে ডুবে ও চোরাই কয়লার গর্তে মাটি চাপা পড়ে গত এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বেশি মৃত্যু হয়েছে সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, বরুঙ্গাছড়া ও যাদুকাটা নদীতে। কিন্তু এসব মৃত্যুর জন্য সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী সোর্স ও তাদের গডফাদারের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে দিনদিন সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
এরফলে একদিকে লাখলাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, অন্যদিকে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর ঘটনা। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করার জন্য সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের গডফাদারকে গ্রেফতার করতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাব প্রশাসনের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ৩ শুল্কস্টেশনের সচেতন বৈধ ব্যবসায়ীরা। এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান- সীমান্ত এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে তার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।