স্পোর্টস ডেস্ক; কাতার বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলা করল পর্তুগাল। তরুণ গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিকে সুইসদের ৬-১ গোলে উড়িয়ে আসরটির কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল সান্তোসের শিষ্যরা। ২১ শতকে মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ৬ গোল করল পর্তুগাল। সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছিল ২০১৪ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানি সেমিফাইনালে (৭-১)।
মঙ্গলবার রাতে লুসাইল সেন্টডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে শুরু থেকে বলের দখল ও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে পর্তুগাল।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে এদিন মাঠে নামে পর্তুগাল। ২০০৮ সাল ও ৩১ ম্যাচ পর দলের প্রথম একাদশে নেই তিনি।
তবে তারকা এ ফুটবলারের অভাব বুঝতে দেয়নি দলটি। ম্যাচের ১৭তম মিনিটে অসাধারণ এক গোলে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়া গনসালো রামোস। থ্রো থেকে বল পেয়ে রামোসের দিকে পাস দেন হোয়াও ফেলিক্স। বল পেয়ে দুরূহ কোন দিয়ে জোরাল শটে গোলটি করেন বেনফিকার ফরোয়ার্ড। ২১ বছর ১৬৯ দিনে গোল করলেন রামোস। যা পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের রেকর্ড।
খেলার ৩৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ান পেপে। ব্রুনো ফার্নান্দেজ কর্নার শট করলে, সেখান থেকে সরাসরি হেডে গোল করেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। এই গোলে দারুণ একটি রেকর্ডও গড়লেন এই ডিফেন্ডার। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়সী ফুটবলার (৩৯ বছর ৩৮৩ দিন) হিসেবে নকআউট পর্বে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়লেন তিনি।
অন্যপাশে ৩০তম মিনিটে হতে পারত আরেকটি চমৎকার গোল। অনেক দূর থেকে জেরদান শাচিরির দুর্দান্ত ফ্রি কিকে বল রক্ষণ দেয়ালের ওপর দিয়ে বাঁক খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া দিয়েগো কস্তার আঙুল ছুঁয়ে যায় বাইরে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে একটি নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় পর্তুগাল। সুইস গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রামোস। তার শট ঝাঁপ দিয়ে ঠেকিয়ে দেন সোমের।
বিরতির পর ১৬ মিনিটের মধ্যে ৪টি গোল হয়। যার ৩টি করে পর্তুগাল। একটি করে সুইজারল্যান্ড। এ সময় হ্যাটট্রিকও পূরণ করেন গনসালো রামোস।
ম্যাচের ৫১তম মিনিটে দালোতের নিচু ক্রসে জটলার মধ্যে আলতো পা লাগিয়েই গোলটি করেন এই তারকা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে হোসে অগাস্তোর পর (বনাম হাঙ্গেরি) দ্বিতীয় পর্তুগিজ হিসেবে বিশ্বকাপ অভিষেকে জোড়া গোল করলেন রামোস।
৪ মিনিট পরে সেই রামোসের পাস থেকে গোল করেন রাফায়েল গুয়েরেরিও। পর্তুগালের পাল্টা আক্রমণ থেকে রামোস পাস দিলে সেখান থেকে দারুণ আত্মবিশ্বাসে গোলটি করেন তিনি। এর ৩ মিনিট পরে সুইজারল্যান্ডের হয়ে একটি গোল শোধ করেন মানুয়েল আকানজি। কর্নার থেকে আসা বলে ফ্লিক করে গোলটি করেন তিনি।
ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে স্বপ্নে হ্যাটট্রিকর পূরণ করেন রামোস। হোয়াও ফেলিক্স থেকে বক্সে বল পেয়ে নিচু শটে গোলটি করেন তিনি। জার্মানি কিংবদন্তি মিরোস্লাভ ক্লোসার (২০০২) পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা অনন্য কীর্তি গড়লেন রামোস।
খেলার ৭৩তম মিনিটে ফেলিক্সকে উঠিয়ে পর্তুগাল কোচ মাঠে নামান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। এ সময় স্টেডিয়াম জুড়ে করতালিতে ফেটে পড়ে। এক মিনিট পর হ্যাটট্রিকম্যান রামোসকে তুলে কোচ মাঠে নামান রিকার্ডো হোর্তাকে।
ম্যাচের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সুইসদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন বদলি নামা রাফায়েল লিয়াও। গুয়েরেরিওর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকেই জোরাল কোনাকুনি শটে দারুণ গোলটি করেন লিয়াও।