নিজস্ব প্রতিবেদক ;হবিগঞ্জে সদর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং সুবিধাসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। গতকাল শনিবার রাতে জরুরি সভা করে পুরো জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি।
আজ রোববার সকাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
হবিগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সজিব আলী বলেন, ‘হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে অন্তত ৪০টি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের আনা-নেওয়া করে আসছে। সম্প্রতি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে জরুরি সেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করে আসছে অ্যাম্বুলেন্স চালক-মালিক সমিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল শনিবার রাতে জরুরি সভা করে পুরো জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।’
জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৪০টি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের আনা নেওয়া করে আসছে। সম্প্রতি হাসপাতাল এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে জরুরি সেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করে আসছে অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিক সমিতি। এদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে এবার পুরো জেলায় ধর্মধটের ডাক দিল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
অনলাইন ডেস্ক:দেশে যারাই অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর গ্রেপ্তারও করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ শুক্রবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাগো হিন্দু পরিষদ আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির আন্দোলন বন্ধে সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে দলটি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেকোনো অবস্থায় আমরা শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যারা অন্যায় করেন, যারা গাড়ি ভাঙচুর করেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারাই গ্রেপ্তার হন।
আগামী ৫ জুন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা চাইতে গত সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে যান জামায়াতের চার নেতা। ডিএমপি কার্যালয়ের ফটক থেকে তাদের আটক করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। জামায়াতের ৫ জুনের কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না, জাননতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জামায়াতের ৫ তারিখের কর্মসূচি বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, বিষয়টি দেখছি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল। জাগো হিন্দু পরিষদের সভাপতি সুজন দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহসভাপতি সুব্রত পাল।
স্পোর্টস ডেস্ক:এ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবল ক্লাব হিসেবে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নাম ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ফোর্বস। বুধবার সেরা ধনী ক্লাবগুলোর একটি তালিকা ঘোষণা করে এই ম্যাগাজিনটি।
সবচেয়ে ধনী ১০ ক্লাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (৬টি) ক্লাব ইংলিশ লিগের। ক্লাবগুলো হচ্ছে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, টটেনহাম হটস্পার ও আর্সেনাল। স্প্যানিশ লিগে সেরা দশ ধনী ক্লাবের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া আছে বার্সেলোনা। এছাড় জার্মানি (বায়ার্ন মিউনিখ) ও ফ্রান্স (পিএসজি) থেকে আছে একটি করে দল।
ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ৩০ ক্লাবের গড় আয় ২.১৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর ২০টি ক্লাবের গড় আয় বের করা হয়েছিল। যার গড় পরিমাণ ছিল ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার। এ বছর শীর্ষ ২০ ধনী ক্লাবের গড় আয় ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ক্লাবগুলোর আয় বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
শীর্ষ ধনী রিয়াল মাদ্রিদের আয় ৬.০৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের চেয়ে আয় ৩০ শতাংশ বেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সম্পদমূল্য ৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ক্লাবটির মালিকানা গ্লেজার পরিবারের হাতে।
২০০৪ সাল থেকেই (করোনার কারণে ২০২০ সাল ছাড়া) সবচেয়ে ধনী ক্লাবগুলোর তালিকা প্রকাশ করে আসছে ফোর্বস। সেরা ধনীর তালিকায় সেরা পাঁচের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সবসময়ই ছিল। এর মধ্যে রিয়াল ৭ বার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১১ বার প্রথম স্থান লাভ করে। বার্সেলোনা ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে ধনী ক্লাবের তকমা পায়।
ধনীর তালিকায় সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২০২১ সালে সৌদি আরবের একটি বিনিয়োগ সংস্থা ৩৭৮ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। বর্তমানে ক্লাবটির মূল্য ৭৯৪ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দলটি।
মুক্তার হোসেন গোদাগাড়ী(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বাল্যবিবাহ নিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রীতি ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়ে কিশোরীদের ছড়িয়ে দিই তারুণ্যের কন্ঠস্বর। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় সোনাদিঘী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুইটি কিশোরী ক্লাবের ওর্য়াল্ড ভিশন বাংলাদেশ, গোদাগাড়ী এপি’র আয়োজনে “মে মোমেন্টাম” ক্যাম্পেন এর অংশ হিসেবে। সোনাদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে। প্রীতি ফুটবল খেলার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন,উপজেলা নির্বাহী কর্ককর্তা(ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন,মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কামরুল ইসলাম,উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আলমগীর কবির তোতা,ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ,গোদাগাড়ী এপি ম্যানেজার প্রেরণা চিশিম।
প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন মিল্টন রোজারিও, শ্যামল এইচ কস্তা, এন্ড্রিকাস মুর্মু, ডেভিড সাংমা, ফিলিপ বিশ^াস, সন্তোষ মিত্র, প্রোগ্রাম অফিসার ওর্য়াল্ড ভিশন বাংলাদেশসহ সংস্থার ফ্যসিলিটেটর। উক্ত কর্মসূচীকে ঘিরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক জনগণের সমাগম ঘটে। এরপর মনোজ্ঞ গম্ভীরা পরিবেশনার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতনামূলক ম্যাসেজ প্রদান করা হয়। বক্তারা বলেন,বাল্যবিবাহ নিরোধে মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন। তারা আশ^স্ত করে বলেন যে, উক্ত বিষয়ে যেকোন ধরণের সহযোগীতা প্রদান করবেন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুরা অতিথিদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তারা নিজেরা কেউ বাল্যবিবাহ করবে এবং অন্যদের বিয়েও শক্তহাতে প্রতিহত করবে। অনুষ্ঠান শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলের হাতে ট্রফি তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চলনায় ছিলেন যুব ও শিশু ফোরামের সদস্যগণ।
বিনোদন প্রতিবেদক: ‘চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বাবা বারবার তার প্রিয় মানুষজন ও আপনাদের কথা বলেছেন। তিনি দেশে ফেরার জন্য পাগল হয়েছিলেন। এ বছরের শুরুতে আমাদের এখানে (এফডিসি) আসার কথা ছিল! কিন্তু সেই আসা আর হলো না। আজ আসলাম, তার মরদেহ নিয়ে। আমার বাবাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি যদি কোনো ভুল করে থাকেন বা কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তার হয়ে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। দয়া করে তাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন।’ কান্নাভরা কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলেন বরেণ্য অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এফডিসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন বাবা অনেকদিন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ছিলেন। কিছুদিন আগে বাবার শরীর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। তখন মা আমাকে ফোন দিয়ে জানান, সেখানে যাওয়ার জন্য। আমি এই খবর শুনে দ্রুত ছুটে যাই। বাবা হয়তো আমার জন্যই পৃথিবীতে ছিলেন। তিনি যাওয়ার সময় অনেক কষ্ট করে গেছেন। মাকে বারবার বলেছেন, দেশে যাওয়ার কথা। অনেকদিন দেশে বাইরে থাকলে মানুষের মন ছুটে যায় দেশে জন্য। বাবার বেলায়ও তাই হয়েছে।
রওশন বলেন, ‘বাবা তার সহশিল্পী ও আপনাদের কথা প্রায়ই মাকে বলতেন। দেশ থেকে কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে (সিঙ্গাপুরের), তিনি সবার কথা জানতে চাইতেন। আর যখন একটু সুস্থবোধ করতেন তখন তিনি সবাইকে ফোন করতেন। বাবা এই দেশ ও দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসতেন। যারা তার সঙ্গে দেখা করেছেন বা কথা বলতেন, তারা তা বলতে পারবেন। আপনাদের মাধ্যমে সবার কাছে অনুরোধ করব, বাবাকে ক্ষমা করে দেওয়ার। আর বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জাহাজ দুর্ঘটনায় টাইটানিক নামের যে বিলাসবহুল জাহাজটি সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল এই প্রথম তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া গেছে। এসব ছবি আটলান্টিকের তিন হাজার ৮০০ মিটার (১২ হাজার ৫০০ ফুট) নিচে ডুবে থাকা জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের প্রথম ডিজিটাল স্ক্যান যা ‘গভীর সমুদ্র ম্যাপিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
এর ফলে পুরো টাইটানিকের ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা! এই তিন মাত্রার দৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ছবিগুলো দেখলে মনে হয় আটলান্টিক থেকে সব পানি সরিয়ে যেন সমুদ্রের তলদেশে পরিত্যক্ত বিশাল আকারের এই জাহাজটির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।
ছবিতে টাইটানিকের খুঁটিনাটি জিনিসও দেখা যাচ্ছে
আশা করা হচ্ছে, ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া এই জাহাজটিতে কী ঘটেছিল এসব দৃশ্য থেকে সে সম্পর্কে নতুন কিছু জানা যাবে। জাহাজটি তার উদ্বোধনী যাত্রায় সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতির বরফ বা আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর ডুবে গিয়েছিল। এ দুর্ঘটনায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। টাইটানিক যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছিল।
টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পার্কস স্টিফেনসন বলেন, ‘জাহাজটির বিষয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন আছে, মৌলিক কিছু প্রশ্ন। যেসবের উত্তর জানা প্রয়োজন। টাইটানিকের বিষয়ে জল্পনা-কল্পনার ওপর ভিত্তি করে কোনো গবেষণা নয়, বরং তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই মডেল বড় ধরনের প্রথম কোনো পদক্ষেপ।’
শতাধিক বছর ধরে পানির নিচে পড়ে থাকার পরেও টাইটানিকের সামনের অংশ দেখলেই চেনা যায়
সমুদ্রের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে। এরপর থেকে জাহাজটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এটি এতো বিশাল ও সমুদ্রের গভীরে এতো অন্ধকার যে ক্যামেরা দিয়ে এতদিন এর যেসব ছবি তোলা হয়েছে সেগুলোর সবই ছিল এই ক্ষয়িষ্ণু জাহাজের কিছু অংশের ছবি বা স্ন্যাপশট। তবে কখনোই ডুবে যাওয়া পুরো জাহাজের ছবি পাওয়া যায়নি। এখন এই নতুন অনুসন্ধানে সমগ্র টাইটানিকের ছবি পাওয়া গেল।
সমুদ্রের তলায় যেভাবে পড়ে আছে
দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রের তলায় জাহাজটি দুটো অংশে ভাগ হয়ে পড়ে আছে। জাহাজের অগ্রভাগ যেখান থেকে বাঁকা হতে শুরু করে ওই অংশ এবং জাহাজের পশ্চাদভাগ। এই দুটো অংশের মধ্যে দূরত্ব ৮০০ মিটার (দুই হাজার ৬০০ ফুট)। ভেঙে যাওয়া জাহাজটির আশপাশে প্রচুর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।
২০২২ সালের গ্রীষ্মকালে ম্যাগেলান লিমিটেড নামে একটি ডিপ-সি ম্যাপিং কোম্পানি এবং আটলান্টিক প্রোডাকশন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান যারা এ বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছে তারা যৌথভাবে এসব ছবি তুলেছে।
নিমজ্জনযোগ্য একটি বিশেষ জাহাজে করে একদল কর্মী এই জরিপ পরিচালনা করেছে যা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মিলিয়ে পুরো টাইটানিকে ছবি তুলতে তারা ২০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছে।
নিমজ্জিত জাহাজের প্রত্যেকটি কোণ থেকে তারা সাত লাখেরও বেশি ছবি তুলেছে যেগুলোর সাহায্যে পুরো টাইটানিকের একটি ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ছবি তৈরি করা হয়েছে।
জাহাজের পেছনের অংশ
এই অভিযানের পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাগেলান লিমিটেডের গেরহার্ড সেফার্ট। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত পানির নিচে ছবি তোলার যতো প্রকল্প তিনি পরিচালনা করেছেন তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।
তিনি আরও বলেন, ‘গভীরতা প্রায় চার হাজার মিটার। আমাদের সামনে ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে সেখানে পানির স্রোতও আছে। আমাদের কোনো কিছু স্পর্শ করার অনুমতি ছিল না, যাতে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আরও ক্ষতি না হয়। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আপনাকে প্রত্যেক বর্গসেন্টিমিটারের ম্যাপিং করতে হবে। এমনকি জাহাজের যেসব অংশ আগ্রহ-উদ্দীপক নয় সেগুলোরও। যেমন যেখানে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সেখানকার মাটির ছবি। কারণ জাহাজের বিভিন্ন অংশকে জোড়া দেওয়ার জন্য এগুলোও ছবি প্রয়োজন।
টাইটানিকের যা কিছু দেখা যাচ্ছে
ছবিতে টাইটানিকের বিশালত্বের পাশাপাশি এই জাহাজের একটি প্রপেলারের সিরিয়াল নম্বরের মতো ছোটখাটো বিষয়ও ধরা পড়েছে। জাহাজটির সম্মুখভাগে মরিচা ধরে ঢাকা পড়ে গেছে। তার পরেও শতাধিক বছর আগে ডুবে যাওয়া এই জাহাজটিকে চেনা যায়। এর ওপরেই রয়েছে জাহাজের ডেক যেখানে একটি গর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটা শূন্যতা দেখতে পাওয়া যায় যেখানে একসময় ছিল জাহাজের বিশাল সিঁড়ি।
আর জাহাজের পশ্চাদভাগে বিভিন্ন ধাতব পদার্থের জঞ্জাল। জাহাজের এই অংশটি সমুদ্রের তলদেশে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ে। টাইটানিকের আশপাশে বিভিন্ন জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এসবের মধ্যে রয়েছে জাহাজ থেকে খসে পড়া অলঙ্কৃত ধাতব বস্তু, মূর্তি এবং মুখ খোলা হয়নি এরকম শ্যাম্পেনের বোতল। সেখানে ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও রয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রের তলানির ওপর অসংখ্য জুতা পড়ে আছে।
পার্কস স্টিফেনসন, যিনি বহুবছর ধরে টাইটানিকের ওপর গবেষণা করছেন। তিনি বলছেন, ‘এসব ছবি প্রথমবার দেখে তিনি ‘বিস্মিত’ হয়েছিলেন। আপনি জাহাজের এমন ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাচ্ছেন যা কখনও দেখা সম্ভব হয়নি। এবং আপনি ডুবন্ত পুরো জাহাজটিকে দেখতে পাচ্ছেন। আশপাশের পরিবেশসহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি এটাকে দেখতে পাচ্ছেন। আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন এটাই এখন এই জাহাজের সত্যিকারের অবস্থা।
তিনি বলেন, ‘এসব ছবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলে ১৯১২ সালের ওই ভয়াবহ রাত্রিতে টাইটানিকের ক্ষেত্রে মূলতই কী ঘটেছিল ওই বিষয়ে নতুন কিছু ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আইসবার্গের সঙ্গে কেমন করে সংঘর্ষ হয়েছিল ওই বিষয়ে মূলত আমাদের ধারণা নেই। আমরা এও জানি না, সিনেমাতে যেমন দেখানো হয়েছে সেরকম করে জাহাজের সামনের একপাশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল কী না। জাহাজের পেছনের অংশ গবেষণা করলে টাইটানিক কিভাবে সমুদ্রের তলদেশে আঘাত হেনেছিল সে বিষয়েও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।’
সমুদ্রের তলায় পড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ, পেছনের অংশ
সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজের ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। পানিতে থাকা অণুজীব বা জীবাণু ক্রমশই এটিকে খেয়ে ফেলছে। এ ছাড়া এর বিভিন্ন অংশ ক্রমশই আলাদা হয়ে খসে পড়ছে।
সমুদ্রে এ রকম একটি দুর্ঘটনার কারণ বুঝতে সময় যে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে ইতিহাসবিদরা এ বিষয়েও সচেতন। কিন্তু এখন যেসব ছবি পাওয়া গেল, সেখান থেকে জাহাজের খুঁটিনাটি বিষয়ও বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে যে এখন হয়তো টাইটানিকের আরও অনেক গোপন বিষয় বের হয়ে আসবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা