এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম),প্রতিনিধি:মিরসরাই উপজেলার পূর্বের পাহাড় ও পশ্চিমের বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকা এবং মাঝের সমতল ভূমি বৃক্ষরোপণের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। কিন্তু সময়ের পথচলায় যুগপোযোগী উদ্যোগের অভাবে সবুজায়নের দিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বর্তমান মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন সবুজ মিরসরাই গড়তে আপ্রাণ চেষ্টায় মত্ত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মিরসরাইয়ে যোগদান করেন। যোগদানের ১০ মাসের পথচলায় তিনি মিরসরাইয়ের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি সবুজায়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তারই প্রেক্ষিতে সবুজ মিরসরাই গড়ার যাত্রা শুরু করেন ১ আগস্ট থেকে। যাত্রা শুরুর দেড় মাসে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ফলজ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করা হয় মিরসরাইজুড়ে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সবুজায়নের এমন সর্ববৃহত উদ্যোগ এটিই প্রথম।
‘গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই, সবুজে সাজাই মিরসরাই’ এই প্রতিপাদ্যে সবুজ মিরসরাই গড়ার লক্ষ্যে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৩ সালে ২৩ লক্ষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার উপজেলার জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বৃক্ষরোপণ ও চারা বিতরণ কর্মসূচীর আয়োজন করে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সবুজ মাঠ চেয়ে যায় বিভিন্ন প্রকার দেড় লক্ষাধিক গাছের চারায়। সেখানে উপস্থিত সকলের হাতে হাতে শোভা পায় নানা প্রজাতির গাছের চারায়। এসময় ফলজ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করা হয় ১৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিল্প প্রতিষ্ঠান, ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২ পৌরসভা, শতাধিক সামাজিক সংগঠন, বেদেপাড়ার বাসিন্দা ও সাধারণ জনসাধারণের মাঝে। বিতরণকৃত চারার মধ্যে ছিল মাল্টা, চাপালিশ, বাদাম, লিচু, হরিতকি, বহেরা, আমড়া, আম, কাঁঠাল, আমলকি, জলপাই, জাম্বুরা, তেতুল, তাল, নারকেল, পেয়ারা, জাম, মেহগনি, বেলজিয়াম, গর্জন, কড়ই, গামারী, নিম, অর্জুন, বকুল, কৃষ্ণচুড়া, জারুল, সোনালুসহ অসংখ্য প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষধি গাছ। গাছের চারা নিতে আসা জেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমরান খান জিসান বলেন, একসাথে এতোগুলো গাছের মধ্যে থেকে পছন্দ মতো গাছের চারা নিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনকে এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ। শিক্ষার্থী মুমতাহিনা চৌধুরী মীম, প্রাপ্তি ও পূজা বলেন, আমরা আমাদের পছন্দের গাছের চারা নিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা গাছগুলো বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করবো এবং সঠিক পরিচর্যা করবো। এছাড়া শিক্ষার্থী সৌপ্তি, রনি, অর্পা, সরনাথ, আল সাবাব চৌধুরীসহ মাঠে উপস্থিত নানা পেশার ও নানা বয়সের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে গাছের চারা পেয়ে। মিরসরাই উপজেলা স্বেচ্ছাসবী সংস্থার অন্যতম সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘মিরসরাইয়ে দিনদিন শিল্পকারখানা গড়ে তোলার হার বাড়ছে। সেইসাথে এখানকার আবহাওয়ার উপর শিল্পকারখানার খারাপ প্রভাব পড়ার আগেই সবুজায়নের উদ্যোগটি যথোপযোগী। আমি সবুজায়নের এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার দাবী জানাচ্ছি।’
মিরসরাই উপজেলা ডায়াগনষ্টিক ও হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বয়সে এত বৃহত পরিসরে বৃক্ষরোপন কার্য্যক্রম আমি দেখিনি। সবুজ মিরসরাই গড়ার লক্ষ্যে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।’ মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ২০২৩ সালে ২৩ লক্ষ বৃক্ষরোপন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুরো মিরসরাইয়ে ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ২৫ হাজার বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। গত ১ আগস্ট করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে ৫০ হাজার এবং একইদিন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে ২৫ হাজার গাছের চারা বিতরণ ও রোপন কর্মসূচীর শুভ সূচনা করা হয়। সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দেড় লক্ষ গাছের চারা বিতরণ ও রোপন করা হয়েছে। আমি সবুজ মিরসরাই গড়তে ‘গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই, সবুজে সাজাই মিরসরাই’-এই শ্লোগান বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। তাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে পুরো চট্টগ্রামে ২০২৩ সালে ২৩ লাখ গাছের চারা লাগানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে আমি এই উদ্যোগেকে স্বাগত জানাই।