
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ মোঃ আবু কাওছার মিঠু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া এলাকার মৃত তছর আলীর তৃতীয় স্ত্রী মোমেলা তার সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় সৎ ছেলে নায়েব আলী মা হিসেবে অস্বীকার করে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বাদিনী নায়েব আলীর কন্যা শিউলীর এমন কর্মকান্ডে এলাকায় আলোচনার তুমুল ঝড় তুলেছেন। এ ঘটনাকে ঘিরে একটি চক্র মোমেলাসহ স্থাণীয় ২নং ওয়ার্ড সদস্য মনির হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফায়দা লুটে নেয়ার পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালপাড়া এলাকার তছর আলী মৃত্যুকালে তৃতীয় স্ত্রী মোমেলাসহ প্রথম স্ত্রীর ৫ ছেলে দিলু মিয়া, আয়েব আলী মিয়া, নোয়াব আলী, নায়েব আলী, জিন্নত আলী, মেয়ে জমিলা খাতুনকে রেখে যান। তছর আলীর সম্পত্তি নায়েব আলী ব্যতিত অন্য সব সন্তানকে মোমেলা লিখে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নায়েব আলী তার মাকে অস্বীকার করে আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। ওইসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে গণমাধ্যমকর্মীদের ভুল তথ্য দিয়ে অপপ্রচার করছে নায়েব আলীর মেয়ে শিউলী। এতে এলাকায় নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নির্দেশনায় মোমেলাকে রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ দেয়ায় ২নং ওয়ার্ড সদস্য মনির হোসেন ও চৌকিদার সোহেলের নামে অপপ্রচার চালায়। এ অপকর্মে আরো জড়ানো হয়েছে বেইলারটেক এলাকার হাজী মো. নুরু মিয়া, বাগবের এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, আক্তার মিয়া, গোয়ালপাড়া এলাকার রহমত আলী, নজরুল ও তছর আলীর ছেলে জিন্নত আলীকে।
উপজেলার বেইলারটেক এলাকার বাসিন্দা হাজী মো. নুরু মিয়া জানান, তছর আলীর তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মোমেলার নামে ওয়ারিশ সনদ থেকে শুরু করে বাড়ীঘর, জমির নামজারী, নাগরিকত্ব সনদ, ভূমি উন্নয়ন কর, সৎ ছেলে মেয়েদের স্বীকৃতি, আদালতের মাধ্যমে পারিবারিক আপোষ বন্টননামা দলিল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে একাউন্ট, পিবিআই রিপোর্ট, ছেলে জিন্নত আলীর অঙ্গীকার নামা, জমির দলিল সম্পাদনসহ বিভিন্ন প্রমাণাধি রয়েছে। তাছাড়া এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠকে শত শত মানুষ তছর আলী ও মোমেলা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে লিখিত স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু মোমেলা তার সম্পত্তি সৎ ছেলে নায়েব আলী ও নায়েব আলীর মেয়ে শিউলীর নামে লিখে না দেয়ায় গৃহবধূর নামে অপবাদ দিচ্ছে।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মনির হোসেন জানান, সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই ও সত্যতা পেয়ে মোমেলা বেগমকে ওয়ারিশ সনদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তিনি গোয়ালপাড়া গ্রামের মৃত তছর আলীর তৃতীয় স্ত্রী। এলাকায় তার ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে সব ধরণের প্রমাণাধি রয়েছে। একটি কুচক্রিমহল আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অভিযুক্ত শিউলীর সাথে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ ছালাহউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, আমার পরিষদ থেকে যাচাই বাছাই ও শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো ব্যক্তিকে ওয়ারিশ সনদ দেয়া হয় না। তাছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রিপোর্টে শিউলীকে মোমেলা বেগমের সৎ নাতিন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। মোমেলার অপর ৪ ছেলে ও মেয়ে মোমেলাকে মা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোমেলার প্রাপ্য অংশ সৎ ছেলে নায়েব আলীকে লিখে না দেয়ায় তার মেয়ে শিউলী নানা ভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। তবে শিউলী আক্তার তার দাদী হিসেবে মোমেলাকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম জানান, বৈধ ওয়ারিশ সনদেই মোমেলা তার স্বামীর প্রাপ্য অংশ নামজারী করেছেন। তাছাড়া নিজের কোনো সন্তান না থাকায় ওই সম্পত্তি তার সৎ ছেলে মেয়ের নামে লিখে দিয়েছেন। কিন্তু মোমেলার সৎছেলে নায়েব আলীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত করায় নায়েব আলীর মেয়ে শিউলী হয়রানী করতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান জানান, এ ধরণের অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে কাউকে মিথ্যা দোষারোপ করে হয়রানি করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।