খবর প্রতিদিন ২৪ডেস্ক :ইন্ডিয়া নামটি পরিবর্তন করে সে দেশের নাম ইংরেজিতে ভারত রাখতে পারে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। অন্তত এমনটাই আলোচনা ছড়িয়েছে। দিল্লিতে জি-২০ সামিটের পরই, আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর দেশটির সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। সেই অধিবেশনে দেশের নাম পরিবর্তন করার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা আনা হতে পারে।
ইতোমধ্যেই দেশের সংবিধান সংশোধন করে ভারত নামকরণের দাবি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই পরিবর্তনের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। অনেক আগেই ভারত শব্দটি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন ভাগবত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার দিবসের দিন লালকেল্লার মঞ্চ থেকে ভারতবাসীর কাছে পাঁচটি অঙ্গীকার গ্রহণের আবেদন করেছিলেন মোদি। যার মধ্যে একটি ছিল দাসত্বের প্রতিটি চিহ্ন থেকে মুক্তি। আর সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি শেষ হওয়া সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনেও সংবিধান থেকে ইন্ডিয়া নামটি বাদ দিয়ে সেখানে ভারত নামটি যুক্ত করার দাবি তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য নরেশ বনশাল। তার যুক্তি এটি ঔপনিবেশিক দাসত্বের প্রতীক।
ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য যে বিশেষ বিমান ব্যবহার করা হয় তাতেও ভারত নামটি খোদাই করা আছে।
সেই জল্পনা আরও বাড়িয়েছে একটি চিঠিতে দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রেসিডেন্ট অব ভারত বলে সম্বোধন করায়। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলির শীর্ষ বৈঠক। ৯ সেপ্টেম্বর বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের নৈশ ভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে জি-২০ প্রতিনিধিদের সেই আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আমন্ত্রণ প্রকাশিত হয়েছে। সেই আমন্ত্রণপত্রে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা রয়েছে। এরপরই জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। রাইসিনা হিলের তরফে দেশটির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলিকে যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে ইতোমধ্যেই সেই আমন্ত্রণ পত্রের প্রতিলিপি ভাইরাল হয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
জি-২০ সম্মেলনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সরকারি আমন্ত্রণপত্রে ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত লেখার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
শুধু আমন্ত্রণপত্রেই নয়, বিদেশি অতিথিদের যে পুস্তিকা পাঠানো হয়েছে তাতেও ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত লেখা রয়েছে বলে জানা গেছে, যার শিরোনাম হিসেবে লেখা রয়েছে- ভারত দ্য মাদার অব ডেমোক্রেসি।
তবে দেশের নাম পরিবর্তনের জল্পনার মধ্যেই মোদি সরকারকে তীব্র নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। টুইট করে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রের উদাহরণ টেনে তিনি লেখেন খবরটা তাহলে সত্যিই! রাষ্ট্রপতিভবন ৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ সম্মেলনের নৈশ ভোজের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে। তাতে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট অব ভারত লেখা রয়েছে। তার অভিমত দেশের সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদ আজ হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে ভারত অর্থাৎ ইন্ডিয়া রাজ্যের সমষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্র কাঠামের ওপরেই আঘাত হানা হচ্ছে।
বিজেপি সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ভারত তো আমরাও বলি। মনে নেই ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো... একটা গান আছে। এতো নতুন করে কিছু করার নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া নামটা সারা বিশ্ব চেনে। হঠাৎ এমন কি হলো যে আজকে দেশের নামটাও পরিবর্তন হয়ে যাবে। কবে দেখবো রবি ঠাকুরের নামও পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নাম বদলে দিচ্ছে, বড় বড় ঐতিহাসিক সৌধের নাম বদলে দিচ্ছে। দেশের ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা।