
মাগুরা থেকে:মাগুরায় ওলকচু চাষে কৃষকরা হচ্ছেন লাভবান ।ওলকচু চাষকরে সফলতায় কচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে মাগুরা জেলার মাগুরা সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রাম। মাগুরায় এই প্রথমবারের মতো ওলকচু চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন সদরের হাজীপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের শতাধিক কৃষক । বাড়ির পাশে পতিত জমিতে, লিচু,আম বাগানের মধ্যে ও মাঠে ওলকচু চাষ করছেন এ এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক । বীজ বপন করার পর সাধারণত ৫-৬ মাসে পরিপূণ হয় ওলকচু । মাটির নিচে এ ফসলটি পরিপক্ক হলে ১০-১২ কেজি ওজন হয় । বর্তমানে জেলায় এ চাষ কম হলেও লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ চাষে কৃষকরা আগ্রহ বাড়ছে । মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ,এ গ্রামের অধিকাংশ কৃষকরা প্রায় ৩৬ বিঘা জমিতে এ ওলকচু চাষ করছেন । এলাকার কৃষকরা বলছেন,এ চাষে একটু পরিশ্রম বেশি এবং পরিপক্ক হয়ে উঠতে সময় লাগে । তারপরেও এ ফসলটির চাহিদা জেলায় ও জেলার বাইরে অনেক কদর রয়েছে । আগে মানুষ এ ফসলটি তেমন খেত না কিন্তু বর্তমানে সব সম্প্রদায়ের মানুষের চাহিদা রয়েছে ওলকচু খেতে । এটির অনেক গুণও রয়েছে । ভর্ত্তা,ভাজি ও তরকারিতে মাছের সাথে রান্না করলে খেতে খুবই স্বাসাদু লাগে । তাই বর্তমানে ওলকচুর চাহিদা বাড়ছে । মাগুরা সদর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামের ওলকচু চাষী ভক্ত কুমার বিশ্বাস জানান,সে প্রথমবারের মতো ৬ বিঘা জমিতে ওলকচু চাষে সাফল্য পেয়েছে । গতবছর এ চাষে তার কিছুটা অনাগ্রহ ছিল । কিন্তু জেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সে আবার চাষ শুরু করে । চাষে কিছুটা পরিশ্রম আছে । তাই ধৈর্য্যসহ কারে আবাদ করলে এ চাষে সাফল্য আসে । সে জেলা কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ পাওয়ার পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মাঠে বীজ রোপন করে । বীজ রোপনের পর মাঠের পরিচর্যা আরো বাড়ায় । তারপর বীজ থেকে চারা গজালে ধীরে ধীরে বড় হলে গাছের আগাছা পরিস্কার করতে হয় । ওলকচু উঠতে দুই মাস বাকী । আগামী ভাদ্র মাসের শেষে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শুরুতে ওলকচু উঠাতে হবে । কৃষকরা জানায়, ,মাটির নিচ থেকে ওলকচু উঠাতে হলে প্রথমে কোদালের সাহায্যে গোড়া খুজতে হবে । একটি ওলকচু ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে । তাই শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করতে হয় । ৬ বিঘা জমিতে এ ওলকচু উঠাতে ২ সপ্তাহ লাগে । বিঘাপ্রতি চলতি বছর ১৮০-২০০ মণ ওলকচু পাবে বলে তারা আশা করছে । একজন র্কষক জানিান, চলতি বছর তার শ্রমিক ও খরচ বাদে ৮ লাখ টাকা লাভ হবে বলে মনে করছে। । বর্তমানে মাগুরা জেলার ওলকচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা,চট্রগ্রাম,রাজশাহী,দিনাজপুর,বরিশাল,ফরিদপুর,মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে । আগের থেকে বর্তমানে ওলকচু চাহিদা বাড়ছে । তাই তাদের গ্রামের অনেকে এখন এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
একই গ্রামের কৃষক উজ্জল বিশ্বাস বলেন,সে এবার ২ বিঘা জমিতে এ ওলকচু চাষ করেছে । গত বছর ১ বিঘায় এ চাষে ভালো লাভবান হয়েছি তাই এ বছর আরো ১ বিঘা বেশি আবাদ করেছে । তিনি জানান, তাদের গ্রামের অনেকে এখনওলকচু চাষ করছে । এ চাষে একটু পরিশ্রম বেশি কারণ এ ফসলটি মাটির নিচে থেকে খুড়ে বের করতে হয় তাই শ্রমিক মুজুরি অনেক বেশি । বিঘাপ্রতি শ্রমিকের খরচ রয়েছে ২ হাজার টাকা । প্রতি ওলকচু গাছে ১০-১২ কেজি হয় । তাই তাদের খরচ অনেকাংশে উঠে আসে । সব কিছু বাদে লাভ ভালো হয় । মাগুরা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ) মো: মোশাররফ হোসেন বলেন,ওলকচু একটি কন্দাল জাতীয় ফসল । মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর জেলায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে ।এ বছর জেলায় ৪৮ হেক্টর জমিতে এ চাষ হয়েছে । এ চাষে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হবে ৩০ টন । এ চাষে পরিশ্রম থাকলেও লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ চাষে জেলার কৃষকরা আগ্রহ বাড়াচ্ছে । জেলা কৃষি বিভাগ এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার প্রদান করেছে । এ চাষে প্রাথমিক পযার্যে মাটিতে গর্ত করে গোরব সার,খড়কুটা,টিএসটি ও ডি এ ইউরিয়া একত্রে মিশিয়ে মাটি প্রস্তত করতে হবে । তারপর বীজ রোপনের পর যতœ বাড়াতে হবে । একটি পরিপক্ক ওলগাছে ১০-১২ কেজি ওল পাওয়া যায় । সাধারণ নিচু ও ছায়াযুক্ত স্থানে এ চাষ ভালো হয় । এ চাষে জেলার কৃষকদের আগ্রহ বাড়লে আগামীতে সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে বলে জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। ।