জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের মতো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটেও বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। এ রুটে চলাচল করা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে টিকিট প্রতি ২০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো পরিবহন ১০ টাকা করে বেশি আদায় করছে। এ নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই তারা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবার দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে আরও কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন।
রোববার (৭ আগস্ট) সকালে শহরের বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা শীতল পরিবহনের এসি বাসে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা, বিআরটিসি ডাবল ডেকারে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের বাসে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা এবং হিমাচল পরিবহনের বাসে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আহসান হাবিব নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সরকার পরিবহন মালিকদের ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। সবসময় সরকার যা ভাড়া নির্ধারণ করে তার চেয়ে তারা বেশি ভাড়া নিয়ে থাকে। এবারও তাই হচ্ছে। সরকার যা ভাড়া নির্ধারণ করেছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আসলে কিছু বলার নেই আমাদের।’
ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন মোতালেব খান। তাকে প্রতিদিনই মুন্সিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন পরপরই ভাড়া বাড়ে। কিন্তু আমাদের বেতন আর বাড়ে না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবন যাপন করাটা অনেক কষ্টকর বিষয় হয়ে গেছে। আগে যা বেতন পেতাম এখনো তাই পাই। কোম্পানি ঠিকমতো কাজ পায় না। তারাই বা বেতন দিবে কোথা থেকে?
তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণের কথা কোনো চিন্তা করে না। যখন যা মন চায় তাই করে। একদিনের ব্যবধানে তেলের দাম বাড়িয়েছে। আমরা কীভাবে জীবন-যাপন করবো সেদিকে সরকারের কোনো ভাবনা নেই।

আদিল রেজা নামে এক বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি তো আর কয়েকদিন পরপর বেতন বাড়ায় না। কিন্তু কয়েকদিন পরপরই ঠিকই ভাড়া বাড়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে। আমাদের জনসাধারণের কথা কেউ চিন্তা করেন না। আমরা মগের মল্লুকের দেশে বসবাস করছি। যখন যার যা মন চায় সে তাই করে। দেখার যেন কেউ নেই। সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে এখন সেটা কার্যকর হচ্ছে কি-না সেটা দেখার কেউ নেই।’
তবে এ বিষয়ে বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেই অনুযায়ী ভাড়া বাড়িয়েছি। আগে ৪৫ টাকা করে টিকিটপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো। এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের হিসেব অনুযায়ী আমাদের ৬৭ টাকা আসে। সেখান থেকে আমরা ৬৫ টাকা করে নিচ্ছি। অর্থাৎ টিকিটপ্রতি ২০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে শুধু তেলের দাম বাড়েনি সবকিছুরই দাম বেড়েছে। যার কারণে আমাদেরও কিছু করার থাকে না।
শীতল ট্রান্সপোর্টের ডিরেক্টর ইব্রাহিম চেঙ্গিস জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিগত দিনের হিসেব অনুযায়ী বাসের মূল ভাড়া আসতো ৭০ টাকা। কিন্তু যাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা ভাড়া নির্ধারণ করেছিলাম ৬৫ টাকা। এবার আমরা ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে টিকিট প্রতি ৮০ টাকা করে রাখছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভাড়া আসে ৮৫ টাকার ওপরে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কথায় আমরা ৫ টাকা করে কম রাখছি।
এদিকে দূরপাল্লার পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেল সার্ভিসের কর্ণধার মো. মশিউর রহমান সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের বাসে নন এসি টিকিটপ্রতি ১০০ টাকা এবং এসি বাসে টিকিটপ্রতি ২০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া নারায়ণগঞ্জে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখছি। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন মালিকদের নিয়ে আমরা বসবো। যাতে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।