Logo
আজঃ সোমবার ২০ মে ২০24
শিরোনাম
সুনামগঞ্জে মাদক,কয়লা ও মোটর সাইকেলসহ ৩ জন গ্রেফতার সারা দেশে পাওয়া যাচ্ছে ইনফিনিক্সের বাজেট ফোন স্মার্ট ৮ প্রো শিল্পী সমিতির নির্বাচন: ডিপজলের দায়িত্ব পালনে স্থগিতাদেশ জারি আগরবাতি তৈরি করে ১০ হাজার নারীর ভাগ্য বদল ইরানের অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন মোহাম্মদ মোখবের রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২২ মাগুরায় মহানবী (সাঃ)কে কুটুক্তি করায় দুটি বাড়িতে আগুন সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশতাধিক মিরসরাইয়ে আবারো মিললো অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, পরে ধ্বংস শীঘ্রই বাজারে আসছে টেকনো ক্যামন ৩০ সিরিজের ফোন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ছাড়াও যারা মারা গেলেন

মালিবাগে গৃহকত্রীর নির্যাতনের পর গৃহকর্মী নিখোঁজ, থানায় জিডি

প্রকাশিত:রবিবার ১৮ জুন ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | ৩৬৭জন দেখেছেন

Image

সোহরাওয়ার্দীঃরাজধানীর পশ্চিম মালিবাগে একটি বাসার গৃহকত্রীর হাতে নির্যাতনের পর নিখোঁজ রয়েছেন রূপা(১৩) নামে এক গৃহকর্মী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নিখোঁজ গৃহকর্মী রুপার মা আশা আক্তার রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার  ১৫ জুন রাত থেকে  গৃহকর্মী রূপা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। রমনা মডেল থানার সাধারণ ডায়েরি জিডি নং-১০৭৮।

নিখোঁজ রুপার মা আশা আক্তার জানায়,রমনা মডেল থানার পশ্চিম মালিবাগ ৩১ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি বাসার তিন তলায় রূপা কাজের মেয়ে হিসেবে তিন বছর যাবত কাজ করে আসছিল।এ বাসার গৃহকত্রীর নাম লিজা (৩৮) একজন কথিত মডেল ও গায়িকা।গত তিন বছর আগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ঢালার পার ইউনিয়নের হতদরিদ্র আনোয়ার ও আশা দম্পতির সন্তান রুপা নামের ১৪ বছরের একটি মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে ঐ বাসায় নিযুক্ত করে। নানা সময়ে ওই গৃহকর্মীর উপর কথিত মডেল ও গায়িকা লিজা নির্যাতন করত। এ কারণে বেশ কয়েকবার তারা মেয়েকে কাজ ছাড়িয়ে গ্রামে নিয়েও যেতে চেয়েছিল। কিন্তু গৃহকত্রী নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগী রুপাকে ওই বাসাতেই রেখে দেন।

হঠাৎ গত ১৫/ ৬/২৩ তারিখে রাত ১১ ঘটিকার সময় রমনা মডেল থানা পুলিশ জানায় আমার মেয়ে রূপা নিখোঁজ। আমরা ১৬/৬/২৩ তারিখ গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে মডেল লিজার বাসায় যাই । তার কাছে আমার 

মেয়ের কথা জানতে চাইলে সে বলে গত ১৩/৬/২৩ তারিখে তোমার মেয়ে বাসার নিচে পানি আনার কথা বলে নিচে যায় সে আর ফিরে আসে নাই। লিজা আরো বলে, এ বিষয়ে থানায় জিডি করেছে রূপাকে খুঁজে বের করার জন্য ।আমরা মেয়েকে ফিরে পেতে কান্নাকাটি করলে সে বিভিন্ন ধরনের ভয় ভীতি ও হুমকি ধামকি প্রদান করে।

গৃহকর্মী  রুপার নিখোঁজের বিষয়ে তার বাবা মা রমনা থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাদের অভিযোগ গ্রহণ না করে  থানা থেকে বের করে দেয় বলেও জানান তারা।

অসহায় নিখোঁজ গৃহকর্মীর বাবা মা কান্না জরিত কন্ঠে গনমাধ্যম কর্মীদের বলেন, স্যার আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেন, লিজা আক্তারের অনেক টাকা, সে থানা পুলিশ ম্যানেজ করে ফেলেছে আমার মেয়েকে হয়তো মেরে ফেলেছে নাহলে বিক্রি করে দিয়েছে আপনারা আমার মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন।

এ বিষয়ে রমনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসান বলেন, গৃহকত্রী লিজা ম্যাডামের জিডিটি আমরা তদন্ত করে দেখছি।পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নিখোঁজ গৃহকর্মীর বাবা মায়েরঅনুরোধে একটি জিডি নেয়ার জন্য অফিসার কে নির্দেশ দেন।এ বিষয়ে গৃহকত্রী লিজা আক্তারের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

গৃহকত্রী লিজার বিষয়ে এলাকাবাসী বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেন ।তারা জানান লিজা কথিত মডেল ও সিঙ্গার, তার ছেলে লাবিব কিশোর গ্যাং নেতা  তাদের প্রভাবে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। 


আরও খবর



মেহেরপুর রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের উদ্যোগে শরবত বিতরণ

প্রকাশিত:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | ৯৪জন দেখেছেন

Image

মজনুর রহমান আকাশ,মেহেরপুরঃতীব্র তাপদাহে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের মেহেরপুর জেলা ইউনিট।

রবিবার (০৫ মে) দুপুরের দিকে মেহেরপুর জেলা পরিষদের সামনের সড়কে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করা হয়। এসময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট মেহেরপুর জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার একরামূল হীরা শরবত বিতরণের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট মেহেরপুর জেলা সদস্য খন্দকার শামসুজ্জোহা সোহাগসহ যুব রেড ক্রিসেন্ট এর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট মেহেরপুর জেলা ইউনিটের সদস্যরা জানান, সারা দেশের মতো মেহেরপুরেও এখন প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন সময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট মেহেরপুর জেলা ইউনিট থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গরমে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদেরকে ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যে মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


আরও খবর



দেশের আট জেলার ১৯ ইউনিয়নে চলছে ভোটগ্রহণ

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | ১৭৬জন দেখেছেন

Image

খবর প্রতিদিন ২৪ডেস্ক :রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে দেশের ৮টি জেলার ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) সাধারণ নির্বাচন,ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, আমরা আশা করছি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

যেসব ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- লক্ষ্মীপুর সদরের দক্ষিণ হামছাদী, দালাল বাজার, বাঙ্গাখা, লাহারকান্দি ও তেওয়ারীগঞ্জ; দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর, ফরক্কাবাদ ও বিরল; রাজশাহীর পুঠিয়ার পুঠিয়া; পটুয়াখালী সদরের কমলাপুর ও ভুরিয়া; বরগুনার আমতলীর আমতলী; সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কুটি; কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, ঈদগাঁও এবং পোকখালী।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। এই সেল নির্বাচন ভবন থেকে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে সেলটি।


আরও খবর



রাণীশংকৈলে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে যুবকের মৃত্যু

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | ৪২জন দেখেছেন

Image
মাহাবুব আলম,রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:পারিবারিক কলহের জেরে রফিকুল ইসলাম (৩৫)নামে এক মহেন্দ্র চালক গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছেন। গতকাল বুধবার (৮ মে) রাত দেড় টায় দিনাজপুর নেয়ার পথে রফিকুলের মৃত্যু হয়।

মৃত রফিকুল উপজেলা পদমপুর উত্তরগাও গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে। রাণীশংকৈল থানা অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে রফিকুল তার স্ত্রী রিতা আকতারকে না জানিয়ে এক জনকে ১৯ হাজার টাকা ধার দেয়। এ নিয়ে তার স্ত্রী, ছেলে হৃদয়ের সাথে বাগবিতণ্ডা বাঁধে ।পরে গতকাল রাত ৯ টায় রফিকুল বাড়ির পাশে হাজ্বী মৌড় থেকে বাড়ি এসে না খেয়ে শুয়ে পড়ে। তার ছেলে ও স্ত্রী ভাত খেতে ডাকলে সে বলে আমি খাবোনা। এর পর তার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে জিজ্ঞাসা করলে রফিকুল বলে আমি দুটি গ্যাস ট্যাবলেট খেয়েছি। 

এ কথা শুনে পরিবারের লোকজন সাথে সাথে তাকে রাণীশংকৈল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে কর্মরত  চিকিৎসক তাকে দিনাজপুর এম এ আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রেফার্ড করেন। দিনাজপুর নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে রফিকুল মারা যায়। পরদিন সকালে  খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

রাণীশংকৈল থানা অফিসার ইনচার্জ আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে ।এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়।  

আরও খবর



আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থীর জরিমানা

প্রকাশিত:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | ৫৪জন দেখেছেন

Image

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ফয়সাল দিদার দিপু নামের এক প্রার্থীর ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট ও সৈয়দপুর উপজেলার সহকারী কমিশন (ভুমি) আমিনুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ওই জড়িমানাও কারাদন্ডের আদেশ দেন। 

জানা যায়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল দিদার দিপু সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া মার্কা প্রতিক পেয়ে চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় শহরের শহীদ তুলশিরাম সড়কে জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে মিছিল বের করেন।ওইসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট আমিনুল ইসলাম তার টিম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন নির্বাচনের আচরণ বিধি ভংগের অভিযোগে ওই প্রার্থীর ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং জড়িমানার টাকা অনাদায়ে একমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে পুলিশি হেফাজতে পাঠান।

এবিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল দিদার দিপু বলেন, আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতিক হেলিকপ্টার হওয়ায় তার প্রবাসী ভাই ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে সৈয়দপুরে নির্বাচনী প্রচারনা চালান। তখন কিন্তু সৈয়দপুরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখেও জরিমানা করেন নাই।ভোটারদের কাছ থেকে ঘোড়া মার্কার প্রার্থীকে কিভাবে ছিটকে ফেলা যায় এজন্যই কৌশল গত ভাবে আমার জড়িমানা ও অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। 

এবিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট আমিনুল ইসলাম জানান,চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল দিদার দিপুর প্রতিক হলো ঘোড়া।একারনে তিনি আইন অমান্য করে জীবন্ত ঘোড়া দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছেন। আর একারনেই নির্বাচনী আচরন বিধি ভংগের অভিযোগে ৪০ হাজার টাকা জড়িমানা ও অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। 

আরও খবর



সাফল্য অর্জনকারী ৫ জয়িতার গল্প

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | ১৫৬জন দেখেছেন

Image
পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি:জয়িতা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতিকী নাম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশব্যাপী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক অভিনব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারী, তথা জয়িতাদের অনুপ্রাণিত করা। এরি ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় ২০২৪ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ জন আত্মপ্রত্যয়ী এবং সংগ্রামী নারী। তারা হলেনঃ

(১) অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী তাপসী রাবেয়াঃ নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর হরিরামপুর (দক্ষিণ) গ্রামের অধিবাসী এসএম রফিকুল ইসলামের মেয়ে তাপসী রাবেয়া একজন শিক্ষিত যুব নারী যার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবার। সেটাতে সফল হতে পারেনি। অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএস পরীক্ষার ব্যর্থ হয়। তবে সে দমে যাবার মেয়ে নয়। ব্যথতায় হচ্ছে সফলতার স্তম্ভ বা খুঁটি এই মন্ত্রে  নতুন উদ্যমে নিজেকে সাজায় সে।

সমাজ, সংসারের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাওয়া রাবেয়া তার সংসার জীবনে জমানো টাকা-গয়না আর আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করা টাকা দিয়ে একটি জমি ক্রয় করে। তারপর সেই জমিতে বাগান করে, পরিচর্যা করে। দুই বছর পর আম বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা পায়। এইভাবে কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়া শুরু করে।

রাবেয়া জানান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার "একটি বাড়ি একটি খামার" এই প্রকল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার স্বামীর জমিতে একটি খামার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই। অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে শ্রমিকদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে গড়ে তুলি "শাহ আলম এগ্রো" নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যা একটি গবাদি পশু পালন, বায়োগ্যাস ও প্রাকৃতিক জৈব সার উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান। 

যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আমি গবাদির পশুর যত্ন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। মৎস্য চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কিভাবে লাভজনক ভাবে করা যায় তা আয়ত্ত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে দেশি মুরগি ও হাঁস পালন শুরু করি। এ লক্ষ্যে নিজস্ব হ্যাচারি স্থাপন করি খামারের মধ্যে। বাচ্চার বয়স আড়াই থেকে সাড়ে তিন মাস হলেই প্রতি চালানে (পাঁচশত) বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা লাভ করি। এছাড়াও বিভিন্ন রকম মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি চাষ করে খামারের এক ইঞ্চি জায়গাও নষ্ট করিনি। 

খামারের এক প্রান্তে একটি ছোট পুকুর আছে। সেটার ধারেই হাঁসের সেড স্থাপন করি। সেই পুকুরে সমন্বিত মাছ চাষের পাশাপাশি শামুকও চাষ করি। ফলে হাঁসের খাদ্যের খরচ অর্ধেক লাগে। আবার হাঁসের বিষ্ঠাগুলো পুকুরের মাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। হাঁসের ডিম ও মাছ বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করি পাশাপাশি আমার পরিবারের আমিষের চাহিদাও পূরণ হয়।

আজ আমি কারো বোঝা নই। অর্থের জন্য এখন আমাকে আর কারো কাছে হাত পাতাতে হয় না। বরং আমি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করি। আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও গরিব অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমি মনে করি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন নারীদের সামাজিক মুক্তির একটি বড় মাধ্যম।

(২) শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী নিয়তি রানী উরাওঃ পত্নীতলা উপজেলার অন্তর্গত পত্নীতলা ইউনিয়নের বুজরুক মামুদপুর গ্রামে বসবাস ৩৮ বছর বয়সী নিয়তি রানী উড়াও এর। তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং স্বামী সন্তানদের ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার অন্য একটি পরিচিতি তিনি হলো মহীয়সী নারী।

বাবা শ্রীমন্ত উরাও ও মা যামিনী উরাও এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম সন্তান। তিনি ছিলেন একটু ভিন্ন প্রকৃতি কর্মচঞ্চল হাসিমাখা মুখের অধিকারী। তার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈনতায়। তিন বেলা তাদের খাবার যোগাড় ছিল না। 

পড়ালেখা করা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। নিয়তি রানী উড়াও তাই নিজের প্রচেষ্টায় লোকের বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করে টাকা জোগাড় করে পড়ালেখার খরচ চালাতো। এভাবে সে জয়পুরহাট খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন। একইভাবে সে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটনের কারণে বাধ্য হয়ে বিবাহ জীবনে আবদ্ধ হন।

নতুন সংসার জীবন শুরু হয়। বছর না যেতেই তার কোলে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ঘর আলো করে আসে। পরিবারের আর্থিক অনটনের জন্য এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের এ.এন.পি স্কুলে ৪ বছর চালানোর পর দুই বছর পিপিএস বিদ্যালয় শিক্ষকতায় আবদ্ধ হন।

এরপর এনজিও সংস্থা আশ্রয় ৪ প্লাস শিশুর শিক্ষকতা করেন। এরই মধ্যে সার্বিক কল্যাণে সমাজের ক্ষেত্রে নারী নেত্রী হিসেবে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর বাংলাদেশ নারীনেত্রী প্রশিক্ষণে চারদিন ব্যাপী জয়পুরহাটে টিএমএসএস তে ১৫০তম ব্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তার জীবনের মিল খুঁজে পান। এই প্রশিক্ষণের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশার সুযোগ হয় মানুষকে চেনা এবং তাদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা খুব ভালোভাবে আয়ত্ব করেন নিয়তি রানী। সামাজিক সমস্যার সমাধানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকায় নারীদের সংঘটিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষের নেত্রী হিসেবে তিনি এলাকায় সুপরিচিত। এখন তিনি দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর পুষ্টি উজ্জীবক হিসেবে সমাজ সেবায় স্বেচ্ছাসেবিকার কাজ করে চলেছেন। মানুষদের স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে থাকেন। তিনি বিভিন্ন দিবসে নিজের গ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এলাকার তরুণ এবং বেকার যুবক যুবতীদের আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করে সকলের কাছে নিয়তি দিদি জনপ্রিয় মানুষের পরিণত হয়েছেন।

নিয়তি রাণী মনে করেন মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাধ্যমে, বয়স এখানে মুখ্য বিষয় নয়। অন্যের জীবনের ভরসার পাত্র কয়জনায় বা হতে পারে? যারা সমাজে মানুষের বিপদে- আপদে পাশে দাঁড়ায়, কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ।

(৩) সফল জননী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা প্রতিমা রানীঃ পত্নীতলা উপজেলার পত্নীতলা ইউনিয়নের বোরাম গ্রামের শ্রী সন্তোষ চন্দ্র দাসের স্ত্রী প্রতিমা রানী। বাবা হরেন্দ্র নাথ মন্ডল ও মাতা কাদম্বীনি মন্ডলের ৪ সন্তানের মধ্যে প্রতিমা রানী তৃতীয় সন্তান। বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। তিনবেলা তাদের খাবার জুটতোনা। লেখাপড়া তো দূরের কথা। স্কুলের গন্ডি পেরুনো ভাগ্যে জোটেনি। দৈন্যতার কারণে একেবারেই অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অস্বাভাবিক নির্যাতন আর সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে সদ্য বিয়ের ১ বছরেই মাথায় জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান। এভাবে সুখে দুঃখে খরকুটু দিয়ে সংসার গড়তে গড়তেই ঠিক ৩ বছর পর তাদের আরও একটি পুত্র সন্তানের জন্য হয়। দুই ছেলে ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে কোন রকমে দিন কাটতো তারই মধ্যে তাদের সংসার আলো করে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। হাটি হাটি পা পা করে সংসার এগুতেই শুরু হয় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের চাপ।

অভাবের সংসার চালাতে অর্থের প্রয়োজন পড়লে তিনি পড়ে যান অর্থনৈতিক দৈনদশার মধ্যে। পাশের গ্রাম কাঁটাবাড়ীর এক বাবুর নিকট থেকে কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পাশাপাশি কিছু গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি নানা ধরনের উৎস থেকে ইনকাম দিয়ে কোন রকমে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালাতে থাকেন। আস্তেই সন্তানরা উঁচু ক্লাসে উঠে আর লেখাপড়ার খরচও বেশি হতে থাকে। এদিকে সন্তানেরা ক্লাস ফাইভে ও এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এস.এস.সিতে লেটার মার্ক নিয়ে ফাস্ট ডিভিশনে ফাস্ট হয়। এইদিকে অভাবের সংসার প্রতিবেশি লোকজনদের তিরস্কার, সামাজিক কুসংস্কার, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সবকিছু উপেক্ষা করে নিজের শেষটুকু দিয়ে প্রচেষ্টায় সন্তানদের মেধা ও হার না মানা পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি সত্যিকারের একজন স্বশিক্ষিত মা হিসেবে সমাজে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিমা রানী'র বড় ছেলে স্বপন কুমার দাস এখন সিনিয়র অফিসার জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ছোট ছেলে অনুপ কুমার দাস সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সিনিয়র ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, নাভানা রিয়েল স্টেট লিমিটেড, আর মেয়ে কৃষ্ণাশ্রী দাস সহকারী শিক্ষিকা কাঁটাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সন্তানদের জীবনে ভরসার পাত্র কয়জন মা'ই বা হতে পারে। যারা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু প্রতিমা রানী একজন মহীয়সী মা হিসেবে সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন।

(৪) নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মান্টি রানী দাসঃ পত্নীতলা উপজেলায় নজিপুর পৌরসভা মামুদপুর গ্রামের অসিম কুমার দাস এর মেয়ে মান্টি রানী দাস। বাবা মার প্রথম সন্তান হওয়ায় মান্টি রানী কৈশর কেটেছিল হেঁসে খেলেই। কিন্তু এই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়না। বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে অভাবের কারণে ২০০৮ সালে তাকে বাধ্য হতে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বেশি দিন ভালো থাকা হয়নি তার। নিজের জীবন এবং সংসার সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তার। একে তো বাল্যকালে বিয়ে আবার অকালে সন্তান ধারণ। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর এবং স্বামীর কটু কথা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। বাচ্চা হওয়ার দীর্ঘ ৯ মাস পরে মান্টির স্বামী মান্টিকে নিতে আসে এবং মান্টিকে নিয়ে যায় শ্বশুড় বাড়ীতে। আবারো তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মান্টির শশুর বাড়ির লোকেরা মান্টি ও তার না-বালক সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মান্টির বাবা- মা বাধ্য হয়ে মান্টিকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে ২০২১ সালে তার সংসার জীবনের ইতি ঘটে।

এরপর মান্টি সেলাই মেশিন পরিচালনার কাজ শেখে। বাবার অভাবী সংসার থেকেই কষ্ট করে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করে। সেলাই মেশিনের ক্ষুদ্র আয় থেকে একটি গরু ক্রয় করে। গরু বড় হলে তা বিক্রয় করে একটি ছোট সিট-কাপরের দোকান দেয়। পাশাপাশি মান্টি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাশ করে। কারিগরি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর মান্টি তার যোগত্যা দিয়ে প্রথমত একটি সোলার কোম্পানীতে চাকুরী, দ্বিতীয়ত- বেডো এনজিওতে মাঠকর্মী পদে, তৃতীয়ত-ব্রাক প্রতিষ্ঠানে হেলথ্ স্বাস্থ্য কর্মী পদে চাকুরি করে, চতুর্থ পর্যায়ে- পত্নীতলা উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিডি প্রকল্পতে ট্রেনার পদে কাজ করে, পঞ্চম ধাপে 'কিশোর- কিশোরী' প্রকল্পে আবৃতি শিক্ষক পদে চাকুরী করে ও চলমান। ষষ্ঠ ধাপে আদমশুমারি ও গৃহগণনা কাজে নিয়োজিত ও একইসঙ্গে মান্টি বাড়িতেই পার্লারের কাজ করে।

সামাজের কিছু কুসংস্কার মানুষ তাকে বিভিন্নভাবে অপবাদ দেয়। তাকে হেও করা চেষ্টা করে। তবুও সমাজের অন্য মেয়েদের অনুপ্রেরনা হয়ে আছে মান্টি। যা অন্যান্য মেয়েদের সামনে চলার উৎসাহ প্রদান করে। মান্টি বলেন স্বপ্ন দেখব জেগে থেকে। অন্যকেও দেখাতে উৎসাহিত করব এমন স্বপ্নই বাস্তবায়ন করতে চাই।

(৫) সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সামিমা নাছরিনঃ পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের সামিমা নাছরিন মতিউর রহমান ও নুরজাহান বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। যার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। আর্থিক অবস্থা ভাল না হলেও মায়ের প্রচেষ্টায় নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলেন। 

শামীমা শংকরপুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে দাখিল পাস করেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও সামাজিক চাপে বাধ্য হয়ে শামীমার মা তার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একই গ্রামের মামুনুর রশিদের সাথে ২০০৫ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। সংসার জীবনে প্রায় শশুর শাশুড়ির নানা কথা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যৌতুক হিসেবে টাকা-পয়সা দিতে না পারাই স্বাশুড়ির নির্যাতন এবং অনাহার সহ্য করতে হতো যা দেখে প্রতিবেশীরা খাবার এনে দিয়েছেন। 

অভাবের সংসার সাজাতে অর্থের প্রয়োজনে তিনি ব্রাক প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। স্কুলের শিক্ষকতার সময় ননদের নির্যাতনে বাবার বাড়িতে এসে দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের গ্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা শুরু করেন। এরই মধ্যে সার্বিক সাক্ষরতার আন্দোলন আনসার ভিডিপি গ্রাম উন্নয়ন দলের সভানেত্রী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর মধ্যে প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে। দৈন্যতা দূরীভূত হতে থাকলে স্বামীও শামীমকে গুরুত্ব দিতে থাকেন। এরপর পত্নীতলা উপজেলা আশা ব্যাংক প্রজেক্ট মাঠকর্মী হিসেবে আকবরপুর ইউনিয়নের কার্যক্রম শুরু করেন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সহায়তার মধ্য দিয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিচিতি হয়ে ওঠেন শামিমা। এছাড়াও বসতবাড়িতে সবজি চাষ, কম্পোস্ট তৈরি জৈব সার প্রস্তুত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন শামীমা।

সামাজিক কাজের অংশগ্রহণ এর সুবাদে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নানা শ্রেণী পেশা মানুষের সাথে মিশা সুযোগ হয়। যখনই তিনি বাড়িতে আসেন গ্রামের মানুষ অভাব অভিযোগ তাকে ব্যতীত করে তোলে। 

২০১৪ সালে গণ গবেষণা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৩০ জন নারীকে নিয়ে সামিমা গড়ে তোলেন মুষ্টির চাল সমিতি। তিনি এখন এই সমতির সভাপতি এলাকার কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলে নিজে গিয়ে তাকে ডাক্তার দেখান। কিংবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা মীমাংসা, অসহায় পরিবারকে আইন সহায়তা, গ্রামের স্যানিটেশন ব্যবস্থা শততাগ উন্নতি করন, সকল শিশু বিদ্যালয় ভর্তি নিশ্চিত করন, গর্ভবতী ও পুষ্টি মায়ের পরিচর্যা করা, বিচার সালিশে মেয়েদের মতামতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার মতো কাজ গুলো তিনি করে থাকেন।২০১৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের গণ গবেষণা ফোরাম নির্বাচিত হলে তিনি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের নারী নেত্রী হিসেবে ইউনিয়ন কমিটির কেশিয়ার ও জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। উপজেলা প্রতিবন্ধী কমিটির সদস্যও তিনি। এতাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

পরিবারের অন্যদের আস্থা অর্জন করে আজ সবার মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন শামীমা। পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এখন প্রধান ভূমিকা পালন করেন। মানুষের আত্মশক্তিকে জাগিয়ে দিতে পারে সেই অজয়কে সহজে জয় করতে পারে শামীমা। আর কোন বাধাই তার চলার পথকে রুখতে পারেম না। পরিবর্তনশীন সমাজ সম্পর্কে শামীমার ভাবনা পরিষ্কার। তিনি সবার আগে নিজের মানসিকতা পাল্টিয়েছেন। আর সমাজ পরিবর্তনে ধনী-দরিদ্র কিংবা নারী পুরুষ আলাদা না রেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেওয়া এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি সমাজের শিক্ষিত ও জন প্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তাহলেই কেবল সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।

আরও খবর