আব্দুস সবুর তানোর থেকে:রাজশাহীর তানোরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক টাকার বিনিময়ে সেচ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম জহুরুল ইসলাম। নিষেধ থাকার পরও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কারনে উপজেলা মাসিক সাধারণ সভায় তোপের মুখে পড়তে হয় ডিজিএমকে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদের হলরুমে সাধারণ মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান।
ইউএনও পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে বলেন মার্চ মাসের সভায় সিদ্ধান্ত হয় নতুন ভাবে কোন সেচ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবেনা। কিন্তু আপনি সেই নিষেধ অমান্য করে কেন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন জানতে চাইলে ডিজিএম কোন সদ উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলেন বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রত্যায়ন দিয়েছেন বলেই সংযোগ দেয়া হয়েছে। ডিজিএমের এমন কথায় ইউএনও বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করার কোন সুযোগ নেই। আপনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সংযোগ দিয়েছেন। আপনি সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে কিসের ভিত্তিতে সংযোগ দিলেন সেটা সভায় পরিস্কার করে বলেন, তানাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইউএনওর এমন কথায় কোন জবাব দেননি ডিজিএম। ইউএনও বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান সংযোগ দেয়ার ব্যাপারে আপনি অবহিত কিনা, তিনি জানান আমি কিছুই জানিনা। এসব নিয়ে আমার দপ্তরেও অভিযোগ আসছে। ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যান কে এবিষয়ে বলার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যান বলেন, গভীর বা অভীর নলকূপের স্কীমের এরিয়ায় সংযোগ দেয়া সঠিক না। আপনারা বিভিন্ন খামারের নামে বানিজ্যিক সংযোগ দিয়েছেন সেই সংযোগ নিয়ে সেচ দিচ্ছে। বানিজ্যিক সংযোগ কতট আছে, অনুমোদিত কতটা এবং আবাসিক সংযোগ থেকে সেচ দেয়া হয় সব মিলে কত সংযোগ আছে ডিজিএমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান এমুহূর্তে এতথ্য দেয়া অসম্ভব। পুনরায় ইউএনও ডিজিএমকে বলেন আগামী সভায় এসব সংখ্যার হিসেব দিবেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অফিসার ইনচার্জ ওসি আব্দুর রহিম, কলমা ইউপির চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী, পাঁচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খাঁন, তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু, টিএইচও বার্নাবাস হাসদাক, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: ওয়াজেদ মিয়া, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরা বেগম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এম ফজলুর রহমান, তানোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আরব আলী, কামারগাঁ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন প্রামানিক প্রমুখ। এসময় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ভূগর্ভের পানি দিনের দিন তলিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভের পানি রক্ষার জন্য বিগত ২০১৩-১৪ সালের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সেচ পাম্প বসানো নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণী অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপজেলা জুড়ে খামার ও বাগানের নামে শতশত সেচ মটরে সংযোগ দিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউএনও হিসেবে যোগদেন বেলাল হোসেন। তিনি অতিগোপনে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রায় ৫০ টির মত সেচ মটর বা ( STW) এর অনুমতি দেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ভূগর্ভের পানি রক্ষার জন্য স্থানীয় সংসদ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নিষেধ করেন কর্তৃপক্ষকে। সংসদের নির্দেশ ও উপজেলা মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পল্লী বিদ্যুৎ তানোর জোন সংযোগ দিতেই আছেন।
নাম প্রকাশে না করে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, সংসদের কথা অমান্য এবং সভার সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করে কোন ক্ষমতা বলে সংযোগ দিলেন ডিজিএম। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর উপজেলায় যে পরিমান জমি আছে সে অনুযায়ী গভীর অগভীর পাম্প আছে। বরং গভীর নলকূপ গুলো রিবোরিং করলে কোন সেচ সংকট হবেনা। নতুন ভাবে সেচ মটর দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এসব নিয়ে মোটা বানিজ্য হয়েছে বলেই সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
ডিজিএম জহুরুল বলেন, আমি ৫১ অনুমোদিত মটরের চিঠি পেয়েছে। কে কি বললো সেটা কোন বিষয় না, আমি আইনগত ভাবে সঠিক আছি।