আদালত প্রতিবেদক; রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা ৩ মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৪৫৩ জন নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় ৪৩৫ জন, মতিঝিল থানার মামলায় ১১ জন এবং শাহজাহানপুর থানার মামলায় ৭ জন গ্রেপ্তার ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে মামলায় ২৩ জন নেতাকর্মীর রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে পল্টন থানার ১৪ জন আসামির ২ দিন করে এবং মতিঝিল থানার ৯ আসামির ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে অসুস্থ বিবেচনায় জামিন দেওয়া হয়।
এদিন পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার ৪৫৩ জনকে কারাগারে আটক রাখার এবং পল্টন ও মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার ২৩ জনের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা আসামিদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস ছালাম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ফজলুল হক মিলন, খাইরুল কবীর খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
রিমান্ড চাওয়া আসামিদের মধ্যে ছিলেন- সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিব, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জানান সেলিম, বিএনপির সহ-জলবায়ু সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সখিপুর থানা যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. শাহজাহান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য একেএম আমিনুল ইসলাম, বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিল আহমেদ, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সজিব ভূঁইয়া, শ্রীপুর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন, ঢাবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ ইকবাল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফ, ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. আল আমিন, রমনা থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল, বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ ফরাজী ও ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদুল হাসান রনি।
শুনানি শেষে আদালত সেলিম রেজা হাবিবের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর অপর আসামিদের মধ্যে পল্টন থানার ১৪ জন আসামির ২ দিন করে এবং মতিঝিল থানার ৯ আসামির ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলায় আসামিপক্ষে বিএনপি দলীয় আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বোরহান উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা খান, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ শুনানি করেন। এ ছাড়া শুনানিকালে আদালত কক্ষের ভেতরে ও বাইরে বিএনপি দলীয় প্রায় ৩ হাজার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে শুনানি শুরু হয়ে প্রায় ৭টা পর্যন্ত চলে। এর আগে দুপুর ২টা থেকে আসামিদের আদালতে আনা হয়। ৪টার মধ্যে আসামি আনা শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সরকার আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সমাবেশে ভীত হয়ে কোনও কারণ ছাড়াই আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আহত হন আরও অনেকে। পরে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হলে চাল, পানি, খিচুড়ি ও নগদ টাকা পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।
অভিযান চলাকালে নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পল্টন মডেল থানায় পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা করেন। এতে আসামি করা হয় ৪৭৩ জনকে, যাদের মধ্যে ৪৫০ জন গ্রেপ্তার। মামলায় অজ্ঞাত আরও দেড় থেকে ২ হাজার জন আসামি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া একই দিন মতিঝিল থানা এলাকায় নাশকতার জন্য ২৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতামা অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, যাদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। অপরদিকে শাহজাহানপুর থানা এলাকায় নাশকতার জন্য ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, যাদের আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন।