মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ:দৈনিক আমার কাগজ পত্রিকা প্রকাশনার ২১ বসর পদার্পণ করেছেন , এর বর্ষপূর্তি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মানবধিকার উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনার শনিবার দুপুরে,ঢাকা জাতিয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে , জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
দৈনিক আমার কাগজ পত্রিকার ২১ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বিপিএএ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি এবং সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, বৃহত্তর নোয়াখালী অফিসার্স ফোরামের সভাপতি এবং সাবেক সচিব বেলায়েত হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ পুলিশের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) কাজী জিয়া উদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার।
সূচনা বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার কাগজ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফজলুল হক ভূইয়া রানা এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হাজী আলাউদ্দিন। রাষ্ট্রীয় অন্য দায়িত্ব থাকায় তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান। একইভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ব্যস্ততার কারণে আসতে না পারায় অপারগতা প্রকাশ করে মুঠোফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী ও সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এ আগস্ট মাসের ১৫ তারিখেই মানবাধিকারের চরম লংঘন হয়েছিল। তিনি মানবাধিকার উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকার উপর আলোকপাত করে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার আগে আমাদের আত্ম সমালোচনা প্রয়োজন। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঔপনিবেশিক সময় থেকেই সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৪৩ সনের দুর্ভিক্ষের কারণে প্রায় কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে দায়ী করে বলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের কারণেই সেদিন প্রকৃত চিত্র সামনে আসেনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক স্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদপত্রের কথা বলা হয়েছে। তবে সরকারকে যেমন দায়িত্ববান হতে হবে, তেমনি গণমাধ্যমকেও দায়িত্ববান হতে হবে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মানুষের অধিকার হরণ করতে চায় সেটা রোধ করতেই সংবিধানে গ্যারান্টি দেয়া আছে।
সংবাদিকদের সুরক্ষার উপর গুরুত্বরোপ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কিছুদিন আগে গোলাম রব্বানী নাদিম নামে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। যে হত্যা করেছে, তার অপরাধ সম্পর্কে রিপোর্ট করার কারণে প্রথমে সাংবাদিককে হুমকি দেয়া হয়েছে, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলা খারিজ হবার পর সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সিপিজের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ৩৫জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রায় ১২শ’ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অনেক মুক্তমনা লেখক-বøগারও রয়েছেন। তবে সেগুলোর বিচার সম্পন্ন হয়নি। দুর্বল অভিযোগপত্র, সঠিক তদন্ত না হওয়া, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আলামত নষ্ট হওয়া, প্রভাবশালী আসামি ইত্যাদি কারণে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হবার প্রতি গুরুত্বরোপ করে আরো বলেন, গণমাধ্যমকে যেমন শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তেমনি যেন ভুল-মিথ্যা সংবাদ পরিবেশিত না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রয়োজন, তবে সেটা যেন জেনারালাইজড না হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপসাংবাদিকতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে মূল ধারার গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা, অপসাংবাদিকতার মাধ্যমেও মানবাধিকার লংঘন হয়। কারো চরিত্র হরণ যেন উদ্দেশ্য না হয়। যেটা সঠিক সেটা বলতে হবে।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্ন বিশ্বব্যাপী। সর্বত্র এ বিষয়ে আলোচনা হয়, সর্বত্র লংঘিতও হয়। এমন কোন দেশ নেই যেখানে এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক বা অভিযোগ নেই। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও অনেক অর্জিত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তবে এতে পরিতৃপ্ত হবার মতো নয়। আমাদের অনেক পথ আরো এগুতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। জাতিসংঘ সনদ এবং বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সনদ স্বাক্ষর করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি মানবাধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, মানুষের অধিকার কিভাবে হরণ হচ্ছে সেটি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হলে প্রশাসনের নজরে আসে এবং প্রতিকারের বিষয়টি সহজ হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সমভাবে জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব সম্যসার সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যা।
-খবর প্রতিদিন/ সি.ব