
- নিজস্ব প্রতিবেদক;হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসন বলে পরিচিত পাবনা-১। সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি বছরের শেষদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এই আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অফিস-আদালত, চায়ের দোকান, ক্লাব, রিকশা-বাস, সিএনজি-নছিমন-করিমন স্ট্যান্ডসহ সর্বত্র এখন নির্বাচনী আলোচনা। কোন দলের পক্ষে কারা কারা মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং কে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন দলের জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। পরপর তিনবার এই আসনে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে এই আসনে বিজয়ী হয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ড. আবু সাইয়্যিদ। ১৯৯১ সালে এই আসনে বিজয়ী হন জামায়াতের মওলানা মতিউর রহমান নিজামী (মানবতাবিরোদী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত)। ২০০১ সালে তিনি আবারও নির্বাচিত হলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তারও আগে এই আসনে বিজয়ী হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় পার্টির মেজর (অব) মঞ্জুর কাদের।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে পরাজিত করেন অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। ওই মেয়াদে তিনি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে ফের মনোনয়ন পেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়্যিদকে হারান তিনি। আবু সাইয়্যিদ প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ১৯৯১ সালে। সেবার জামায়াতের মতিউর রহমান নিজামীর কাছে পরাজিত হলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিজয়ী হন তিনি। তবে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারও নিজামীর কাছে হারেন তিনি।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। এ ছাড়াও দলটির মনোনয়ন চান সাঁথিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন, দলের বাইরে কোনো কাজ করবেন না।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে শামসুল হক টুকুর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়্যিদ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন তার ছেলে ও বেড়া পৌরসভার মেয়র আসিফ সামস রঞ্জন। তিনি জানান, পাবনা-১ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর বিকল্প নেই। তাই তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে চায়।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে পাবনা-১ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের প্রার্থী মতিউর রহমান নিজামী। শোনা যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে দলটি থেকে প্রার্থী হবেন বেড়া উপজেলা শাখার আমির ডা. আব্দুল বাছেদ খান। তিনি বলেন, জামায়াত তৃণমূলের সংগঠন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্যতম ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয় তার দল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আবারও এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বাছেদ খান জানান, এই আসনে জামায়াত প্রার্থী ১৯৯১ সালে ৩৮ শতাংশ, ’৯৬ সালে ৩২ শতাংশ, ২০০১ সালে ৩৯ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ৩৩ শতাংশ ভোট পায়।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেত্রী খাইরুন নাহার খানম। তিনি দাবি করেন, নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলীয় কর্মকা-ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ভোটের পরিবেশ এলে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি নির্বাচন করবেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মামলা তথ্য সংরক্ষণবিষয়ক সম্পাদক, ধোপাদহ ইউনিয়নের দুইবার নির্বাচিত চেয়াম্যান সালাহ উদ্দীন খান দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন করবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, এই আসনের সাঁথিয়া উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮২১ আর বেড়া অংশে (১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউপি) নিয়ে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭৩।