মজনুর রহমান আকাশ,মেহেরপুরঃকৃষি নির্ভর মেহেরপুরে গম চাষ বেড়েছে। চাষিরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত বারি-৩৩ ও ডাব্লিউ এম আই আর (ডগজও) গম-৩ নামের দুটি গমের জাত চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে ফসলটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই দুটি জাতের বাহিরে অন্য জাতের গম আবাদ করে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের কারনে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে জেলার অনেক চাষি।
মেহেরপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগি। গত কয়েক বছর ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদেরকে গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। গেল বছর ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলণশীল গমের নতুন নতুন জাত আবাদ করে কৃষকরা শংকামুক্ত হয়েছেন। তবে অনেক চাষি কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে বাড়ির সংরক্ষণ করা বীজ বপন করেছিলেন। এসব চাষিদের গম ক্ষেতে ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। তবে এর পরিমান অনেক কম।
গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, অনেক গম ক্ষেত পরিপক্ক হবার আগেই শুকিয়ে গেছে। অথচ কাটা মাড়াই করতে আরো দুই তিন সপ্তাহ বাকি। গমের মাইজ থেকে শীষ শুকিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। ব্লাস্ট রোগ গমের শীষ শুকিয়ে রস শুণ্য করে ফেলেছে। এতে ফসলের আশি শতাংশ ফলন বিপর্যয় ঘটবে। যেখানে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ গম হওয়ার কথা। সেখানে ব্লাস্ট আক্রান্ত জমির গম ফলন পাওয়া যাবে ২ থেকে ৩ মণ।
গাংনীর ঝোড়াঘাট গ্রামের গম চাষি আকমল হোসেন জানান, মাঠে এবার ব্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। তিনিও দুই বিঘা গম আবাদ করেছেন। তবে সপ্তাহ খানেক হবে গম সব হলুদ হয়ে কাটার মত অবস্থা হয়ে গেছে। কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। তিনি প্রদীপ জাতের গম চাষ করেছেন।
নওদা মটমুড়া গ্রামের গম চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, নিজের উৎপাদিত গম বীজ বপন করেছিলেন। অনুকুল আবহাওয়া থাকার পরও ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। পরিপক্ক না হলেও দেখতে মনে হচ্ছে সব গম ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছেন তেরাইল গ্রামের গম চাষি আজিজুল হক। তিনিও নিজ বাড়ির সংরক্ষিত বীজ বপন করেছিলেন। তার তিন বিঘা জমির গম চাষে খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা।
গাংনী উপজেলার পলাশীপাড়া গ্রামের গম চাষি ইমারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বারি-৩০ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন। গেল বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন। গম চাষ বেশ লাভজনক। এক বিঘা গম আবাদে খরচ হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা। আর পাওয়া যায় ২০ মন গম। নতুন জাতের গম চাষ করায় কোন ব্লাস্ট দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক দুূর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে এবং গমচাষীরা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি। মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিজয়কৃষ্ণ হালদার জানান, গমের মূল্য বৃদ্ধি আর অনুকুল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে।
যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৬৬ টন। কৃষি বিভাগ পক্ষ থেকে চাষিদের ব্লাস্ট প্রতিরোধি জাতের উচ্চফলনশীল জাতের গম চাষ করতে পরামর্শ ও প্রনোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে সার ও গম বীজ। বাজার দর ভালো থাকলে আগামীতে এ অঞ্চলে গমের আবাদ আরো বাড়বে। যারা কৃষি বিভাগের কথা না শুনে বাড়িতে সংগ্রহে থাকা গম বীজ ব্যাবহার করেছে তাদের খেতে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। আগামীতে চাষিরা নতুন জাত আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।