২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রতিবছর সামাজিক সুরক্ষার কভারেজ ও বাজেট বরাদ্দ উভয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং বাজেট বরাদ্দ ২০০৮-৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, দরিদ্রতম এলাকা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতের মতো বিষয়গুলো নেওয়া হচ্ছে বিবেচনায়।
তিনি আরও জানান, শহর এলাকায় ‘শহর সমাজসেবা কার্যক্রম’ এবং ‘এসিড দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’ নামে মোট ৪টি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ কার্যক্রমে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দুঃস্থ-প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নেওয়া কার্যক্রম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুঃস্থ প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতার ক্ষেত্রে প্রবীণ নারীকে দেওয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৫৭ দশমিক ১ লাখ ভাতাভোগীর জন্য বয়স্ক ভাতা খাতে ৩ হাজার ৪৪৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা চলমান থাকবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
এসব উপকারভোগীর সংখ্যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৭ লাখ বাড়িয়ে ২০ দশমিক ৮ লাখের স্থলে ২৩ দশমিক ৬৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসময় মাসিক ভাতার হার ৭৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এছাড়া নতুন অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
ভাতা কর্মসূচির বাইরেও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ। আর বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় রয়েছে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি কার্যক্রমে এবং দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির আওতায় পল্লী ও শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে শতকরা ৫০ ভাগ নারী এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত দুঃস্থ মহিলা ভাতা এবং পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমে শতকরা ১০০ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রমসমূহে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক থাকায় এগুলো বার্ষিক গড়ে ১ দশমিক ২০ লাখ নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সামাজিক অপরাধপ্রবণ নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ভরণ-পোষণ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এতিম শিশুদের খোরাকী ভাতা ২০২২ সাল হতে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে মাসিক জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হয়েছে। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত বিপন্ন শিশুদের সেবা প্রদান করে পরিবার বা নিকট আত্মীয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পুনঃএকত্রীকরণ/পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে কেন্দ্রসমূহে মোট ২ হাজার ২৯১ জন (১ হাজার ৮৮ জন ছেলে এবং ১ হাজার ২০৩ জন মেয়ে) শিশু অবস্থান করছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। এ জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৯ হাজার বাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৫৪ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। এ খাতে নতুন অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।
‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর অধীনে করোনাকালে নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে যারা পেয়েছেন তারাসহ মোট এক কোটি পরিবার টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সহায়তা পাচ্ছে। সরকারি এ উদ্যোগের ফলে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি স্বল্প-আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মহামারির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। যদিও মহামারির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের অগ্রগতি কিছুটা হোঁচট খায়, কিন্তু সরকারের পদক্ষেপে আবার উন্নয়নের গতিধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।