বিএনপির মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও যুবদলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ। এবার মেয়াদোত্তীর্ণ স্বেচ্ছাসেবক দলের পালা। শিগগির সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটির সিদ্ধান্ত দেবে বিএনপির হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের তালিকাও পাঠানো হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির কান্ডারি হিসেবে দু-চারজনের নামও শোনা যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রয়াত শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই দুজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে ছিলেন।
এই কমিটির মেয়াদ শেষের এক বছর পর ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবু মারা গেলে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীসময়ে তাকে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড ২ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নেবেন। এরপর ৩ আগস্ট সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কমিটির বিষয়ে।
ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে চূড়ান্ত মত নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির তালিকায় সাবেক চার ছাত্রদল নেতার নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে দুজন সংগঠনের মধ্য থেকে আর দুজন সংগঠনের বাইরের।
দলীয় হাইকমান্ডের কাছে যতগুলো প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে প্রত্যেক প্রস্তাবনায় কমন নাম হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের নাম রয়েছে।
এছাড়া সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানের নাম রয়েছে। বর্তমানে সাবেক এই চার ছাত্রনেতাকে নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে নিয়ে চলছে শীর্ষ পদে আলোচনা। সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব থাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলে শুধু স্থবিরতাই নয়, হাবিবুন-নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের যে উজ্জ্বলতা তৈরি হয়েছিল তাও হয়েছে বিবর্ণ। আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে নিয়ে হাইকমান্ড কী মূল্যায়ন করেন সেটা এখন দেখার বিষয়।
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সারাদেশে সেভাবে তিনি তার সাংগঠনিক ইমেজ গড়ে তুলতে না পারলেও খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের কাছে বেশ পরিচিত।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাইরে থেকে সারাদেশের কর্মীদের কাছে পরিচিত ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। জিয়া পরিবারের অনুগত হিসেবেও নাম রয়েছে তার। দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত থাকা সাবেক এই ছাত্রনেতা ১/১১ থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়।
সংগঠনের বাইরে থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে আরেকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন রাজিব আহসান। ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। মামলা-হামলা ও জেলের শিকার হয়েছেন তিনি।
নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তরে থাকা মো. নাজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কমিটি গঠন স্বাভাবিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে যে কোনো সময় কমিটি দিতে পারেন।
তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টিকে গুঞ্জন হিসেবে দেখছেন সংগঠনের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান এ ধরনের কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির জুয়েলের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাব প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের মনোভাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সেক্রেটারি এক মাস ধরে হজে আছেন। তার সঙ্গে আমি কীভাবে সমন্বয় করবো?
আপনার সংগঠনের কর্মীদের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আপনি কথা বলেন না এটা কতটা সত্যি? জবাবে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আপনারা কি কখনো তার সঙ্গে আমাকে মারামারি করতে দেখেছেন?
সংগঠন ভালো আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান চাইলেই নতুন কমিটি দিতে পারেন।