আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোট ও না ভোটসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে এসব প্রস্তাব দেয় দলটি।
সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত প্রস্তবনায় দলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মুকিত বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে-২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে দেশে-বিদেশে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক এ বাংলাদেশে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হওয়া দুঃখজনক। অপনাদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর অনেক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই আপনাদের সততা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন যাতে করে বিতর্কমুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনগণ আপনাদের প্রতি আস্থাশীল হতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১) সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য সরকারের কাছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
২) নির্বাচনের কমপক্ষে ছয় মাস আগে ভোটারদের হালনাগাদ তালিকা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) নির্বাচনের তিন মাস পূর্ব থেকে এবং নির্বাচনের পরবর্তী কমপক্ষে একমাস পর্যন্ত মেজিট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারকে অনুরোধ জানাতে হবে।
৪) নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষে আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনীর ও নির্বাচন কমিশনের জনবলের স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে এক বিভাগে একদিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন ও নির্বাচন শেষে এক দিনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।
৪) যে সব কর্মকতার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল বা আছে এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার সব পর্যায়ে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে হবে।
৫) ভোট দেওয়ার গোপনকক্ষ ব্যতীত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ও বুথে অনিয়ম রোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভোট কেন্দ্রের বাইরে বড় মনিটরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬) প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাস ও কন্সুলেটগুলোতে তাদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না বা বর্তমানে নেই এমন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৭) আগামী নির্বাচন থেকেই স্বল্প পরিসরে হলেও ই-ভোটিং চালু করতে হবে।
৮) সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
৯) নির্বাচন কমিশনের খরচে ও উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিচিতি সভা অনুষ্ঠানের বিধান করতে হবে।
১০) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১১) ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোট-এর বিধান চালু করতে হবে।
১২) নির্বাচনের সময় সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা সরকারি ব্যয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালায়। অন্যদিকে অনেক বিরোধী দলকে অনেক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই সরকারি ব্যয়ে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো থেকে বিরত রাখতে নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলগুলো যাতে এখন থেকেই সভা-সমাবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে ভুমিকা রাখতে হবে।
আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশনকে থেকেই সকল দলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরী করতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।