তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি নিয়ে পরিপক্ব গাছ পালা উজাড় করে আরো দু বিঘা ডাঙ্গা জমিতে পুকুর খনন করছেন বিএনপি নেতা ধান ব্যবসায়ী মতিউর ও আতাউর বলে নিশ্চিত করেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কাউসার আলী। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপির) শ্রীখন্ডা গ্রামে ঘটেছে পুকুর খননের ঘটনা। বিএনপি নেতার এমন প্রতারনা ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার দুপুরের পরে ভূমি কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে হেরো ট্যাক্টরের চাবি নিয়ে অফিসে আসেন।
খবর পেয়ে খননের দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য বকুল হোসেন ও ভেকু মেশিন মালিক মোহনপুর উপজেলার জামাল উদ্দিন অকাথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন ভূমি কর্মকর্তা কে। বকুল মেম্বার ক্ষমতাসীন দলের মেম্বার, তিনি প্রশাসন থেলে শুরু করে সবাইকে ম্যানেজ করার নাম করে পুকুর মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও একই ইউপির ছাঐড় গ্রামের আরেক বিএনপি নেতা আবুলের পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে ফসলী জমিতে মাটি দিচ্ছেন। সেই মাটিতে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তা মাটিতে রুপান্তর হয়েছে। এতকিছুর পরও রহস্যজনক কারনে নিরব অবস্থায় প্রশাসন। অথচ স্থানীয় সাংসদের কঠোর নির্দেশ কোনভাবে রাস্তা নষ্ট করা যাবে না, এজন্য প্রশাসন কঠোর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন। আবার সামন্য বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে কোনভাবেই চলাচল করা যাবে না, ঘটবে ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা। ফলে দ্রুত অভিযান দিয়ে এসব মাটি ও ভেকু দস্যুদের আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি উঠেছে।
কামারগাঁ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কাউসার আলী জানান, শ্রীখন্ড মৌজার অন্তর্গত ১২১৭ দাগে ৭০ শতাংশ পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি রয়েছে। খারিজকৃত জমির মালিক রহিমা বিবি, জজে আব্দুর রশিদ। কিন্তু ৭০ শতাংশ পুরাতন পুকুর সংস্কারের নাম করে জালিয়াতির মাধ্যমে ১২১৮ দাগে ৪৪ শতাংশ সহ বিভিন্ন দাগে দুই বিঘা ডাঙ্গা জমিতে পুকুর খনন করছেন মতিউর ও আতাউর। আমি কয়েকদিন আগে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে খনন করতে নিষেধ করি। কিন্তু খননের দায়িত্বে থাকা মেম্বার বকুল ও ভেকু মালিক জামাল অকাথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। রোববার দুপুরের দিকে পুনরায় গিয়ে দেখি খননের মাটি হেরো ট্যাক্টরে করে বহন করার কারনে পাকা রাস্তা প্রচুর ভাবে ভেঙ্গে গেছে। আমি একটি হেরো ট্যাক্টরের চাবি নিয়ে আসি এবং কাজ বন্ধ করতে বলি। পুকুরে ভেকু মেশিন ছিল, আসার খবর পেয়ে চালক পালিয়ে যায়। পরে বকুল মেম্বার ও জামাল নানা ভাবে হুমকি দিয়ে পুনরায় খনন কাজ করছেন। অনেক গুলো পরিপক্ব তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হবে। তিনি আরো জানান ছাঐড় গ্রামে পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে চার ফসলী জমি ভরাট করছেন বকুল মেম্বার ও জামাল। মাটি বহনের জন্য পাকা রাস্তার চিহ্ন নাই। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, শ্রীখন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পুরাতন পুকুর সংস্কার করার সময় কখনো থানা পুলিশ বাধা দেয় কখনো ক্ষমতাসীন দলের লোকজনরা বাধা প্রদান করেন। তিনি নিজের মার্কেটে মাটি দিচ্ছিলেন সেটাও বন্ধ করা হয়। তাহলে একই গ্রামের মতিউর কিভাবে নতুন পুকুর কাটছেন এবং মাটি বানিজ্য করছেন। কেউ এসে বাধা দিচ্ছেনা, ও ক্ষমতাসীন দলের মেম্বার বকুল দায়িত্ব নিয়েছেন এজন্য। আইন সবার জন্য সমান। এক চোখে তেল আরেক চোখে নুন কেন ও মতিউর বড় ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা একারনে সবাই বিক্রি হয়ে গেছে। আবার একই ইউপির ছাঐড়গ্রামে পুকুর সংস্কার ও মাটি দিয়ে চার ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে, হিমাগার নির্মান হবে। সদ্য নির্মিত গ্রামের রাস্তা ও মুল রাস্তার চরম বেহাল হয়ে পড়েছে। ধূলা বালির জন্য গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে রাস্তায় পানি দিচ্ছে। একারনে পাকা রাস্তা কাদায় রুপ নিয়েছে। দিনরাত সমান তালে কাজ করলেও সবাই অজানা।
সুত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ চার বা তিন ফসলী জমিতে কোন শিল্প কলকার খানা করা যাবে না। সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চার ফসলী জমি ভরাট করছেন রাজশাহীর বড় ঠিকাদার বজলুর ও খড়িবাড়ি বাজারের মোটরসাইকেল শোরুমের মালিক শরিফ। প্রায় ১৮-২০ বিঘা চার ফসলী জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে হিমাগার হচ্ছে। হিমাগারের জন্য বর্ষা মৌসুমে কয়েকগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জমিতে প্রচুর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
হিমাগার নির্মানকারী বজলুর জানান, হিমাগার তৈরি না হলে আলু কোথায় রাখবে। ফসলী জমিতেই তো হিমাগার করতে হবে। হিমাগার করতে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা লাগে না।
ছাঐড় হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মতিউর জানান, ছাঐড় গ্রামের পাকা রাস্তার চিহ্ন নাই। পানি দেওয়ার কারনে কাদায় পরিনত হয়ে পড়েছে। আমিও দূর্ঘটনার স্বীকার হয়েছি। পুরাতন পুকুর সংস্কার করার অধিকার আছে, কিন্তু সরকারী পাকা রাস্তা নষ্টের কোন এখতিয়ার নাই। বড় মাপের লোকজন আমি ছোট মানুষ, আমার কথা কেউ শুনবে না। দ্রুত মাটি বহন বন্ধ না হলে দূর্ঘটনার শেষ থাকবে না। তিনি আরো জানান, ছাঐড় গ্রামে যে পুকুর সংস্কার করা হচ্ছে গত মাসে তার পাশেই সংস্কার করে মাটি বহনের কারনে রাস্তা নষ্টের দায়ে জামাল ও আরেকজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। তাহলে একই জায়গায় একই কায়দায় কিভাবে কি রাস্তা নষ্ট করতে পারে। কেন অভিযান দেওয়া হচ্ছে না।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা জানান, দিন রাত হেরো ট্যাক্টর ও ভেকু মেশিনের শব্দে অতিষ্ঠ সবাই। রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না। ছেলে মেয়েরা পড়া লিখা করতে পারছে না। বাড়ি ঘর ধূলায় সাদা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বকুল মেম্বার ও জামালের ভয়ে কেউ কিছুই বলতে পারছেনা। হিমাগার নির্মান হলে বর্ষা মৌসুমে এর যন্ত্রনা টের পাবে জনসাধারন। রাঘব বেয়ালরা জড়িত এজন্য সবাই নিরব।
খননের দায়িত্বে থাকা মেম্বার বকুল ও ভেকু মেশিন মালিক জামাল জানান, সবাইকে ম্যানেজ করে খনন করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
টাকা দিলে সবই হয়, ওই সময় সামান্য ভুলের জন্য জরিমানা দিতে হয়েছে। এজন্য সব লাইন ঠিক করে কাজ করা হচ্ছে। হাজারো লিখে কোন কাজ হবে না বলেও দম্ভক্তি প্রকাশ করেন তারা। থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়াকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি দেখছি বলে দায় সারেন। গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানোরের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ইউএনও জানে আলম জানান, পুরাতন পুকুর সংস্কার করতে পারবে, কিন্তু সরকারী পাকা রাস্তা নষ্টের কোন অধিকার নেই। আর নতুন ভাবে পুকুর খননের প্রশ্নই আসেনা। আমি সোমবার তানোরে গিয়ে চিরনি অভিযান পরিচালনা করব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা তহসীল দারকে গালমন্দ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন এই কর্মকর্তা।