স্টাফ রিপোটার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ইচ্ছেমতো প্যানেল চেয়ারম্যান বানানো, নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও অর্থ বণ্টনের রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করায় জেলা পরিষদের মাসিক সভা থেকে ৮ সদস্যকে বের করে দেয়া হয়েছে।
গতকাল পরিষদের তৃতীয় মাসিক সভায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। পরিষদের সদস্যরা অভিযোগে জানা গেছে দ্বিতীয় দিন সভার শুরুতেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নেয়া সিদ্ধান্তের রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে বলেন চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার তাদের।
এতে রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যান তাদের সভা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। দুপুর সাড়ে বারোঘটিকার সময় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় বেলা দেড়ঘটিকার সময়। এরপর মিনিট ১৫ সভায় অংশগ্রহণ ছিল ৮ সদস্যের। এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে ওই সদস্যদের মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগের নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের কথা বলেন। এ নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে তার তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই সদস্যরা সভা ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। এদিকে সভাকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদে একজন ইন্সপেক্টর ও ২ সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন পুলি মোতায়েন করা হয়।
সংরক্ষিত নারী সদস্য এম,বি কানিজ জানান, মিটিংয়ে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান আমাদের বলেন আমরা নাকি উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের অপমান করার জন্যে লজ্জাস্কর ইতিহাস তেরি করেছি।এটি নিন্দনীয় কাজ হয়েছে বলে তিনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে নিন্দা জানাতে বলেন।
এ সময় আমরা নিন্দার বিষয়টি বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানকে আমাদের কথা শুনতে বলি। তখন চেয়ারম্যান বলেন, কথা বলতে চাইলে আগে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন, না হলে বেরিয়ে যান। আপনাদের মিটিংয়ে অংশ গ্রহন করার দরকার নেই। যেহেতু আমাদের কথা বলতে দেবে না, আর ইতিপূর্বে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ ও বরাদ্দ বণ্টনের বিষয়ে চেয়ারম্যানের ইচ্ছেমতো নেয়া রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে বলা হচ্ছে, আমরা সেটি না করে বেরিয়ে আসি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা থেকে নির্বাচিত পরিষদ সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, মিটিংয়ে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান বিগত মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের স্বাক্ষর দিতে বলেন। আমাদের কোনো কথা শুনতে চাইছিলেন না তিনি। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নিন্দা প্রস্তাব দিতে বলেন। আমরা এরও প্রতিবাদ করি। এর আগে গত ৯ই ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবর চেয়ারম্যান আল মামুন সরকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন পরিষদের ৮ সদস্য। তারা হচ্ছেন- আখাউড়ার সাইফুল ইসলাম, সরাইলের পায়েল হোসেন মৃধা, নাসিরনগরের সামসুল কিবরিয়া, আশুগঞ্জের বিল্লাল মিয়া, বাঞ্ছারামপুরের আবুল কালাম আজাদ, বিজয়নগরের বাবুল আক্তার, সদর উপজেলার বাবুল মিয়া ও সংরক্ষিত সদস্য এম বি কানিজ।
এতে অভিযোগ করা হয়, গত ১লা জানুয়ারি পরিষদের দ্বিতীয় সভায় বরাদ্দ বিতরণ নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন চেয়ারম্যান। পরিষদের প্রথম সভায় সকল সদস্যদের মতামত বা ভোটগ্রহণ ছাড়া তার অনুসারী ৩ সদস্যকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। তাছাড়া সদস্যদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন নিজেই। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রকাশ্যেই বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনের ভোটার উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
এটি প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে সদস্যরা তাদের অভিযোগে বলেন, জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২২ অনুযায়ী জেলা পরিষদের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ/পৌরসভা সমূহের উন্নয়ন কার্যক্রমের সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রগণকে পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু জেলা পরিষদের রাজস্ব ও এডিপি বরাদ্দ স্থানীয় সরকারের ওই সকল চেয়ারম্যান ও মেয়রের অনুকূলে বিভাজন করার কোনো বিধান রাখা হয়নি। অথচ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার তার নিজ ক্ষমতা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের ৪ লাখ টাকা করে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ বিভাজন করেন। শুধু তাই নয়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উন্নয়ন প্রকল্পের চাহিদা প্রদানের একটি ফরম ছাপিয়ে বণ্টন করেছেন।
এ ছাড়া কোনো অনুমোদন ছাড়াই ৮/১০ লাখ টাকায় ৩ হাজার কম্বল ক্রয় করেন।
-খবর প্রতিদিন/ সি.বা