‘বিএনপির রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, সুষম বণ্টনের স্বপ্ন ও চেতনা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। তবে এটা ঠিক ৪৫ বছরের পরিক্রমায় বিএনপি সেই আদর্শ ও চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়েছে।’নানা চড়াই-উতরাই পার করে প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে পা দিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠন করেন দেশের ইতিহাসের এক কঠিন সময়ে সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে আসা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ওই সময় বিশ্বের অনেক দেশেই সামরিক বাহিনীর প্রধানেরা রাজনীতির মাঠে পা রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেননি। ওই সব শাসকের পতনের পর তাঁদের শাসনব্যবস্থারও অবসান ঘটে।
এদিক থেকে জিয়াউর রহমান ব্যতিক্রম। তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। প্রবল জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের সমপর্যায়ে নিয়ে এলেন দলটিকে এবং এই কাজ করলেন তিনি অতি অল্প সময়ে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। এই দলের সংগঠক সবারই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল। এর বিপরীতে জিয়াউর রহমান কিছু মধ্যবয়সী মধ্যম সারির রাজনীতিবিদ, কিছু পেশাজীবী ও কিছু তরুণকে নিয়ে গড়ে তুললেন বিএনপি। বলাবাহুল্য, এই দলে নানা মত ও পথের রাজনীতিবিদের সম্মিলন ঘটেছিল। ফলে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন শেষ পর্যন্ত বিএনপি টিকবে কি না।
বিএনপিকে অনেকেই ঠাট্টা করে রাজনৈতিক ক্লাব বলতেন। কিন্তু এই রাজনৈতিক দলই শেষ পর্যন্ত অন্যতম শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। এই ৪৫ বছরের পরিক্রমায় বেশ কয়েকবার দলটির হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ভাঙনের মুখোমুখি হয়েছে একাধিকবার। বিগত প্রায় ১৬ বছর দলটি ভয়াবহ দমন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নানাবিধ মামলা চলমান। এমন কোনো দিন নেই, যেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আদালতে হাজিরা থাকে না। দলটির অনেক নেতা-কর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। এত কিছুর পরও দলটি এখনো প্রবলভাবে রাজনীতিতে টিকে আছে। এটা দলটির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও স্বীকার করতে বাধ্য হবে।
প্রথাগত রাজনীতির মাঠে তৈরি না হওয়ার পরও বিএনপির পরিপক্ব দলের মতোই নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয়কে আলোচনার ভরকেন্দ্র হিসাব করে এগোনো যেতে পারে। এ দুটি দিক হচ্ছে প্রায়োগিক ও আদর্শিক ভাবনা। প্রায়োগিক দিকটি হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, মানচিত্র ও একটি পতাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কার্যকর রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায়, তা আমরা অর্জন করতে পারিনি। স্বাধীনতার পরপরই একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়েছিল। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছিল চতুর্দিকে।