বাবুল রানা, বিশেষ প্রতিনিধি মধুপুর টাঙ্গাইল:টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাধীন গোলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে গত ৪ডিসেম্বর সোমবার বাসচাপায় আব্দুল হামিদ ও অটোভ্যান চালক ছরোয়ার হোসেন(ছরো) গুরুতর ভাবে আহত হয়।ঘটনাটি ঘটে মধুপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোলাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড নামক স্থানে।এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মধুপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় একঘন্টা অবরোধ করে রাখে। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের দাবি পুরণের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেয় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বলাবাহুল্য, গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার বিকালে গোলাবাড়ী থেকে মধুপুরগামী ব্যাটারি চালিত অটোভ্যানকে মধুপুরগামী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয়। এতে অটোভ্যান চালক ছরোয়ার হোসেন ও আব্দুল হামিদ গুরুতর ভাবে আহত হন। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের অবস্থার আরও অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য দুইজনকেই ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করেন।
টানা ৫দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে গত ৭ডিসেম্বর বৃহস্প্রতিবার ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোভ্যান চালক সরোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়।ছরোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পার হতে না হতেই শুক্রবার ৮ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোভ্যানে থাকা একমাত্র যাত্রী আব্দুল হামিদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বাড়ি মধুপুর উপজেলাধীন গোলাবাড়ি ইউনিয়নের লোকদেও গ্রামে।একজনকে কবরস্থ করার আগেই আরেক জনের মৃত্যুর খবর শুনে এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এ যেনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল যা এলাকাবাসীর হৃদয়কে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।স্থানীয় লোকজন জানান, চলতি বছরে শুধু মাত্র এই গোলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে বিনিময় পরিবহনের অযোগ্য অনভিজ্ঞ ড্রাইভার ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হেলপার দিয়ে গাড়ী চালানোর কারণে প্রায় ৩০/৩৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কেনো বারবার সাধারণ পথচারী বিনিময় গাড়ির কারণে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়? কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ধনবাড়ি থেকে মধুপুর আসতে সাধারণত ২০মিনিট সময় লাগে কিন্তু মধুপুর থেকে বেশি যাত্রী নেওয়ার আশায় অন্য গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে ৭/৮ মিনিটেই মধুপুরে চলে আসে।
মধুপুর থেকে বেশি যাত্রী নিতে গিয়ে দুই গাড়ির পাল্লা-পাল্লিতে রাস্তার সাধারণ পথচারী হয়ে যাচ্ছে মৃত্যু পথযাত্রী। তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত এই একই স্থানে সাধারণ পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে। আমরা বারবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই গোলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের দুইপার্শ্বে দুটি স্পিড ব্যাকার (বিট)এর দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছি কিন্তু আজও অব্দি আমাদের দাবি পুরণ হয়নি। স্থানীয়রা জানান, বেপরোয়া বিনিময় গাড়ি বন্ধের দাবিতে অবরোধ করা হলেই উপজেলা প্রশাসন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদেরকে থামিয়ে দেন।
তাদের এই মিথ্যা আশ্বাসের কারণে প্রতিনিয়ত এই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ পথচারীদের মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর সোমবার গোলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আবারও বেপরোয়া বিনিময় গাড়ির ঘাতক ড্রাইভার কেড়ে নিলো ২টি তাজা প্রাণ। শুধু মৃত্যুতেই সীমাবদ্ধ নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শতশত অসহায় মানুষ আজ পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির মৃত্যু অথবা পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে থাকার কারণে অনেক সচ্ছল পরিবারের সন্তান আজ টাকার অভাবে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী আর এমন অকাল মৃত্যুর মিছিল দেখতে চায় ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই গোলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে দুইটি স্প্রিড ব্যাকার (গাড়ী গতিরোধ বিট) তৈরী এবং ধনবাড়ি থেকে পরিচিত বিনিময় পরিবহনের অদক্ষ ড্রাইভার ও হেলপার দিয়ে গাড়ী চালানো মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবি জানান, তা নাহলে পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় না হওয়া পর্ষন্ত আবারও রাস্তা অবরোধ করবেন বলে জানান তারা।
-খবর প্রতিদিন/ সি.ব