
এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:মিরসরাইয়ে বখাটেদের ভয়ে ৪ মাস পর স্কুুলে গেলো সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মায়ের পথ আটকালো বখাটেরা। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামী করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো মঘাদিয়া ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকার এতিম উল্ল্যাহ হাজী বাড়ির মৃত মোশারফ হোসেনের পুত্র এমরান হোসেন বাদশা প্রকাশ শুভ (২০), মুরাদ আলী মিয়া বাড়ীর ওসমান গণির ছেলে ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগে সহ-সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগর (২১), মহসিন আলী মেম্বার বাড়ির দুদু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের গণ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুদ্দিন প্রকাশ সালমান (২০), নসরত আলী হাজী বাড়ীর নজরুল ইসলামের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রিফাত হোসেন (২০)। আসামীদের মধ্যে এতিম উল্ল্যাহ হাজী বাড়ির ওমর ফারুকের পুত্র সবুজ (২৩) পলাতক রয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ মে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাইয়ের মিঠানালা ইউনিয়নের সাধুরবাজার এলাকায় সবুজ (২১) ও শুভ (১৯) নামের দুই বখাটে মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর তানিয়া (ছদ্মনাম) ছাত্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় চুল ধরে টানাটানির একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর মাথার স্কাফ খুলে ফেলে তারা। গাড়িতে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর গাড়ি দিয়ে চাপা দেয়ারও চেষ্টা করে। পরে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের চিৎকাওে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বখাটেরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন সহপাঠীরা ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ি নিয়ে যায়। ঘটনার দিন বিকালে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা। অভিযোগের পর পুলিশ সবুজ নামের একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। আরেকজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। জামিনে এসে সবুজ ও শুভ দলবল নিয়ে বাড়ির আশেপাশে এসে ঘরের টিনে ঢিল ছুড়ে এবংকি মেয়েকে তুলে নেওয়ারও হুমকি দেন। বখাটেদেরে ভয়ে দীর্ঘ ৪ মাস স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মেয়ে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের উপর গত ১৪ সেপ্টেম্ব মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে মেয়েকে আশ^স্ত করে আবারো স্কুলে যাওয়ার জন্য। মেয়ের বাবা বলেন, প্রশাসনের আশ^াসে আমার স্ত্রী রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যায়। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাধুরবাজার পুরাতন সিএনজি স্ট্যান্ডে মামলার ১ নং ও ৫ নং আসামীসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার স্ত্রীর গতিরোধ করে ১ ও ৫ নং আসামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও প্রানণাশের হুমকি প্রদর্শন করেন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করলে আমার স্ত্রীসহ আমার মেয়ে ও আমাদেরকে প্রাণে হত্যা করার হুমকি প্রদান করেন। এই ঘটনায় মিরসরাই থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বলেন, ‘আমরা অনেক গরীব, কোনোরকম দিন যাপন করি। আমাদের একমাত্র সন্তানকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করার স্বপ্ন ছিল। বখাটেদের ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেই। প্রশাসনের সহযোগিতায় আজকে (রোববার) মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে বখাটেরা আবার হুমকি দেয়। পুলিশকে জানালে বখাটেদের থানায় নিয়ে যায়।’
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জসীম উদ্দিন বলেন, কিছু বখাটে আমার স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই ঘটনায় পুলিশ দুই জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করলেও তারা আবার জামিনে এসে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে। এই ভয়ে মেয়েটি দীর্ঘ ৪ মাস যাবৎ স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তাকে আবার স্কুলে আসার পরামর্শ দিয়েছি। প্রশাসনের আশ^াসে রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবার যথারীতি স্কুলে আসে মাকে নিয়ে। ওই শিক্ষার্থীর মা স্কুলে মেয়েকে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ওরা আবার তার গতিরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় ৩ ছাক্রলীগ নেতা আটকের বিষয়ে মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নছর রিপন বলেন, গ্রেফতারকৃত ৪ জনের মধ্যে তিন জন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে রয়েছে। যদি অপকর্ম করে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এটির দায় সংগঠন বহন করবেনা। আমরা তদন্ত করে যদি তারা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, বখাটেদের ভয়ে দীর্ঘ ৪ মাস পরে এক ছাত্রী প্রশাসনের আশ^াসে রবিবার সকালে তার মায়ের সাথে স্কুলে যায়। মেয়েকে স্কুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মামলার ১ নং ৫ নং আসামী শিক্ষার্থীর মায়ের গতিরোধ করে হুমকি দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকার এতিম উল্ল্যাহ হাজী বাড়ির মৃত মোশাররফ হোসেনের পুত্র এমরান হোসেন বাদশাহ প্রকাশ শুভকে ১ নম্বর আসামী করে ৪ জনরে নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।