Logo
আজঃ মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম
মলি আক্তার রিতার উদ্যোগে পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ রাশিদা আক্তার শান্তার উদ্যোগে পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা যশোরে সর্বোচ্চ ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হিলি সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত জয়পুরহাটে আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তাহিরপুরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি টাকার মালামাল পাচাঁরের অভিযোগ ডোমার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ টিপু-প্রীতি হত্যা: ৩৩ জনের বিচার শুরু থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনই বড় চ্যালেঞ্জ: নতুন রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত:সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ২৫৮জন দেখেছেন

Image

অনলাইন ডেস্ক; আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষেভাবে সম্পন্ন করতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়ার তাই নেবেন বলে জানিয়েছেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ সোমবার বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মাত্র ৮-১০ মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমার  এই মুহূর্তের দায়িত্ব হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে মনোযোগ দেওয়া। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত হয়। এটা আমাদের এখন দরকার। আমরা বলি যে অরাজনৈতিক দাবি তুলে, সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে- সেটা করা সম্ভব নয়। আমরা সংবিধানের বাধ্যগত।’

তিনি বলেন, ‘এই সংবিধানের ৫৮/সি- এটা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এটি এখন সংবিধানের অংশ নয়। সংবিধানের অংশের মধ্যে থেকে আমাদের সকল দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার পুরো দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা তুলে ধরে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির কিছু কিছু দায়িত্ব আছে যে নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে কাজ করতে করতে যেসব অন্তরায় সৃষ্টি হয় সেই অন্তরায়কে দূর করা। নির্বাচনী পরিবেশকে সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা।

নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা লেখা ছিল, বহু সময় ধরে। কিন্তু এ কমিশন গঠন করার প্রক্রিয়ায় কেউ হাত দেয়নি। কিন্তু এইবার আমাদের নেত্রী, জাতীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘‘আমি সংবিধানের ভেতরে থেকেই সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন করব’’। এবং তিনি তাই করলেন। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় তিনি নির্বাচন কমিশন আইন করলেন। এবং সেই আইনের অনুবলে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা (নির্বাচন কমিশন) সম্পূর্ণ স্বাধীন, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। সেই সিইসি থেকে ইসিরা সব সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বলেই গাইবান্ধার উপনির্বাচনে কমিশন তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি মনে করি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংঘাত ভুলে গিয়ে, ২০১৪-২০১৮ সালের মতো সংঘাতে না গিয়ে, মানুষের ক্ষতি না করে, জান-মালের ক্ষতি না করে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তাহলেই এ দেশের মঙ্গল, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগোবে এবং দেশে একটি সত্যিকারের সরকার, শক্তিশালী সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৭ ধারায় বলা আছে যে দেশের মালিক জনগণ। তাহলে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই তো তাদের জন্য ভালো-মন্দের বিষয়টি তাদেরই দ্বারাই তো প্রয়োগ করা সম্ভব এবং কাজ করা সম্ভব।’

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাকে এখন... এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সারাদেশে। নির্বাচনের ১০ মাস আগে থেকেই যে সমস্ত সংঘাত সৃষ্টি করা...।’

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে আপনার উদ্যোগ থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, এটা তো শুধু সরকারের কামনা নয়, সারা বিশ্বের কামনা। সারাদেশের সকল জনগণের কামনা। যে সব দলের অংশগ্রণে সে যতেই ছোট দল হোক, যতই বড় হোক, জোট হোক- সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের নিজেদের স্বার্থেই আসতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিশ্চিত করি যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে... তারা (বিরোধীরা) সংবিধানের সংশোধনীর কথা বলে, নানা যুক্তি দেখায়, যারা দেখায় তাদের যুক্তি তাদের কাছে আছে। আমি এটা নিয়ে বিতর্কে যাব না। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে চাই।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘তাহলে আমাদের দায়িত্ব কী? সরকারের দায়িত্বটা কী? সরকারের দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনকে তাদের যে প্রদত্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেই ক্ষমতার মধ্যে থেকেই তারা যেন সকল দায়িত্ব পালন করে।

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো কোনো সময় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। জাতীয় দুর্যোগ দেখা যায় বা নির্বাচন নিয়ে কোনো অরাজকতা অবস্থা দেখা যায় বা দেখা যায় যে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরিবেশটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে সময় রাষ্ট্রপতির কিছু কিছু কাজ করার থাকে। আমি এ ব্যাপারে পিছপা হব না, কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি দেশ স্বাধীন করেছি, এতটুকু রক্ত তো দিয়েছি দেশের জন্য।

নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে অবস্থার... নৈরাজ্য সৃষ্টির যদি চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে আমার যে ভূমিকা সে ভূমিকা আমি রাখব। কিন্তু আমি চাইব একটি ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে আমি যেন আমার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করি। যাতে সেখানে পক্ষপাতিত্বের চিহ্নও যাতে না থাকে। মানুষ উপলদ্ধি করতে পারে যে প্রেসিডেন্ট যে কাজটি করেছে তা দেশের জন্য করেছে। যদি প্রয়োজন হয়, আর যদি প্রয়োজন না হয়... যদি মানুষের প্রত্যাশা হয় আমি নিরপেক্ষভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি মানুষের মধ্যে যেন এই চিন্তাধারাটা যদি আসে আসুক, এটাই আমি চাই যে আমি আমার ক্ষমতাটাকে প্রয়োগ করেছি শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে। কাউকে অবদমিত করার স্বার্থে নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব সেখানে যদি ভুক্তভোগী হয় শাসকদল, হলে হতে পারে। যদি বিরোধীদল হয়, হলে হতে পারে। কিন্তু আমি চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি সেখানে আমার দায়িত্ব পালন করব।  আমি ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


আরও খবর



গাংনীতে আইসক্রীম কারখানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৫জন দেখেছেন

Image

মজনুর রহমান আকাশ,মেহেরপুর প্রতিনিধিঃঅনুমোদনহীন আইসক্রীম কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়  করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর। আজ বুধবার দুপুরের মেহেরপুরের গাংনীর হাড়াভাঙ্গা গ্রামের আইকন বেভারেজ নামের এই কারখানায় অভিযান পরিচালিত হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর মেহেরপুর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সজল আহম্মেদ জানিয়েছেন, আইকন বেভারেজ নামের একটি আইচক্রীম কারখানার কোন অনুমোদন নেই। বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও ফ্লেভার দিয়ে আইসক্রীম তৈরী করা হচ্ছিল।

অনুমোদন না থাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়  করা হয়েছে। সেই সাথে জব্দ করা হয়েছে আইচক্রীমে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও ফ্লেভার।


আরও খবর



মুজিব নগর দিবসে জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু উচ্চশিক্ষা বৃত্তি পেলেন ৩৮ শিক্ষার্থী

প্রকাশিত:বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৪জন দেখেছেন

Image

এস এম শফিকুল ইসলাম,জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃমুজিব নগর দিবস উপলক্ষ্যে জয়পুরহাটে মেডিক্যাল,প্রকৌশল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৪০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে চৌদ্দ লক্ষাধিক টাকার বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।বেসরকারি সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আজ (বুধবার) দুপুরে সংস্থার অটিটরিয়ামে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তির চেক বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমীন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। পরে শিক্ষার পাশাপাশি সমাজ বিনির্মানে শিক্ষার্থীদের অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী, জাকস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমীন, উপ-নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার, সাংবাদিক আব্দুল আলীম প্রমূখ। শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত: পিকেএসএফ এর অর্থায়নে সংস্থাটি এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ ৬৫৩ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে প্রায় ৯১ লাখ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত দরিদ্র পরিবারের তিন জন শিক্ষার্থীকে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১ কোটি পঁচানব্বই লাখ টাকা শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করেছে।


আরও খবর



টানা ৫ দিন পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি শুরু

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৯৩জন দেখেছেন

Image

ইয়ানূর রহমান শার্শা,যশোর প্রতিনিধি:ঈদ উল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের টানা ৫ দিনের ছুটি শেষে আবারও আজ সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে  শুরু হয়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল ৫ দিন এ পথে বন্ধ ছিল আমদানি,রফতানি। ৫ দিন পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় এতে সরকারের প্রায় দেড় শ' কোটি টাকা রাজস্ব আয় পিছিয়েছে। বন্দরেও জমেছিল পণ্য জট। এখন পণ্য খালাস শুরু হওয়ায় কমতে শুরু করেছে পণ্য জট।

এদিকে আমদানি,রফতানি শুরু হওয়ায় বেনাপোল বন্দরে আবারো কর্মব্যস্ততা ফিরেছে। 

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম  জানান, সরকারী ছুটি শেষে পুনরায় এ পথে আমদানি-রপ্তানিসহ সকল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে বন্দর থেকে  দ্রুত পণ্য খালাস নিতে পারেন সংশিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সকালে বন্দর ঘুরে দেখা যায়, যে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ছুটিতে গিয়েছিল তারা অনেকেই কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগ দিয়েছেন। পণ্য খালাসে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাণিজ্যের সাথে সংশিষ্ট ব্যবসায়ীসহ বন্দর, কাস্টমসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বন্দর শ্রমিকেরা। 

জানা যায়, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি, ২শ ট্রাকের মত রফতানি হয়। আর  বন্দর থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য খালাস হয়। আমদানি পণ্য থেকে দিনে সরকারের রাজস্ব আসে ৩০ থেকে ৪০ কোটির মতো।


আরও খবর



মেহেরপুরে প্রাণি সম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৭০জন দেখেছেন

Image

মজনুর রহমান আকাশ,মেহেরপুর প্রতিনিধি:গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, প্রতিটি পরিবারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে গবাদিপশু পালনের কোন বিকল্প নেই। কারণ বিপদের সময় তাদের লালন করা পশুগুলোই কাজে লাগে। তাই গবাদি পশুপালনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলায় প্রশিক্ষণসহ নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সরকার। রয়েছে কর্মসংস্থান ব্যাংক, যুব উন্নয়ন অধিদিপ্তর, মহিলা সংস্থা ও সমাবসেবা অফিস থেকে মানুষ এখন স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারছেন।

আজ বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর চত্ত্বরে আয়োজিত প্রাণি সম্পদ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে দিনব্যাপী গবাদিপশু মেলায় প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত থেকে এ বক্তব্য রাখেন তিনি। মন্ত্রী আরো বলেন, জেলায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ টাকা করে ঋণে একটি করে গরু প্রদান করা হচ্ছে। এখন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। তাই প্রতিটি মানুষ সরকারের এসব সুযোগ সুবিধা নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সরকারের এসব সূযোগ সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে চাকুরী থেকে অবসর অথবা আর কোন বেকারের কর্মসংস্থানের অভাব হবেনা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শামীম হাসান, পুলিশ সুপার এস.এম নাজমুল হক, ভারপ্রাপ্ত জেলা পাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ হারিছুল আবিদ।

অনুষ্ঠানে ৫২জন সফল খামারী অংশ গ্রহণ করেন। পরে ২৬ জন খামারীকে পুরষ্কৃত করা হয়। এর মধ্যে বিশেষ পুরষ্কারে ভূষিত হন ৮জন খামারী।অপরদিকে, ্য়ঁড়ঃ;প্রাণীসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ ্য়ঁড়ঃ; এই প্রতিপাদ্যে মেহেরপুরের

গাংনীতে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারী হাসপাতালের চত্বরে উপজেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারী হাসপাতাল আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী ছিলেন মেহেরপুর- ২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ এএসএম নাজমুল হক সাগর।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার সভাপতিত্বে এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ খালেক, পৌরসভার মেয়র আহমেদ আলী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন।

মেলায় ৪৪ টি সফল খামারী অংশগ্রহণ করেন। প্রধান অতিথিসহ অতিথিবর্গ বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন ও খামারীদের সাথে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৬ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ খামারীদের মধ্যে পুরস্কার ক্রেস্ট ও চেক বিতরণ করা হয়।একইভাবে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী করা হয়।


আরও খবর



সাফল্য অর্জনকারী ৫ জয়িতার গল্প

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৬জন দেখেছেন

Image
পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি:জয়িতা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতিকী নাম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশব্যাপী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক অভিনব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারী, তথা জয়িতাদের অনুপ্রাণিত করা। এরি ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় ২০২৪ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ জন আত্মপ্রত্যয়ী এবং সংগ্রামী নারী। তারা হলেনঃ

(১) অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী তাপসী রাবেয়াঃ নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর হরিরামপুর (দক্ষিণ) গ্রামের অধিবাসী এসএম রফিকুল ইসলামের মেয়ে তাপসী রাবেয়া একজন শিক্ষিত যুব নারী যার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবার। সেটাতে সফল হতে পারেনি। অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএস পরীক্ষার ব্যর্থ হয়। তবে সে দমে যাবার মেয়ে নয়। ব্যথতায় হচ্ছে সফলতার স্তম্ভ বা খুঁটি এই মন্ত্রে  নতুন উদ্যমে নিজেকে সাজায় সে।

সমাজ, সংসারের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাওয়া রাবেয়া তার সংসার জীবনে জমানো টাকা-গয়না আর আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করা টাকা দিয়ে একটি জমি ক্রয় করে। তারপর সেই জমিতে বাগান করে, পরিচর্যা করে। দুই বছর পর আম বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা পায়। এইভাবে কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়া শুরু করে।

রাবেয়া জানান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার "একটি বাড়ি একটি খামার" এই প্রকল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার স্বামীর জমিতে একটি খামার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই। অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে শ্রমিকদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে গড়ে তুলি "শাহ আলম এগ্রো" নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যা একটি গবাদি পশু পালন, বায়োগ্যাস ও প্রাকৃতিক জৈব সার উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান। 

যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আমি গবাদির পশুর যত্ন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। মৎস্য চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কিভাবে লাভজনক ভাবে করা যায় তা আয়ত্ত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে দেশি মুরগি ও হাঁস পালন শুরু করি। এ লক্ষ্যে নিজস্ব হ্যাচারি স্থাপন করি খামারের মধ্যে। বাচ্চার বয়স আড়াই থেকে সাড়ে তিন মাস হলেই প্রতি চালানে (পাঁচশত) বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা লাভ করি। এছাড়াও বিভিন্ন রকম মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি চাষ করে খামারের এক ইঞ্চি জায়গাও নষ্ট করিনি। 

খামারের এক প্রান্তে একটি ছোট পুকুর আছে। সেটার ধারেই হাঁসের সেড স্থাপন করি। সেই পুকুরে সমন্বিত মাছ চাষের পাশাপাশি শামুকও চাষ করি। ফলে হাঁসের খাদ্যের খরচ অর্ধেক লাগে। আবার হাঁসের বিষ্ঠাগুলো পুকুরের মাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। হাঁসের ডিম ও মাছ বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করি পাশাপাশি আমার পরিবারের আমিষের চাহিদাও পূরণ হয়।

আজ আমি কারো বোঝা নই। অর্থের জন্য এখন আমাকে আর কারো কাছে হাত পাতাতে হয় না। বরং আমি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করি। আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও গরিব অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমি মনে করি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন নারীদের সামাজিক মুক্তির একটি বড় মাধ্যম।

(২) শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী নিয়তি রানী উরাওঃ পত্নীতলা উপজেলার অন্তর্গত পত্নীতলা ইউনিয়নের বুজরুক মামুদপুর গ্রামে বসবাস ৩৮ বছর বয়সী নিয়তি রানী উড়াও এর। তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং স্বামী সন্তানদের ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার অন্য একটি পরিচিতি তিনি হলো মহীয়সী নারী।

বাবা শ্রীমন্ত উরাও ও মা যামিনী উরাও এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম সন্তান। তিনি ছিলেন একটু ভিন্ন প্রকৃতি কর্মচঞ্চল হাসিমাখা মুখের অধিকারী। তার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈনতায়। তিন বেলা তাদের খাবার যোগাড় ছিল না। 

পড়ালেখা করা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। নিয়তি রানী উড়াও তাই নিজের প্রচেষ্টায় লোকের বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করে টাকা জোগাড় করে পড়ালেখার খরচ চালাতো। এভাবে সে জয়পুরহাট খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন। একইভাবে সে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটনের কারণে বাধ্য হয়ে বিবাহ জীবনে আবদ্ধ হন।

নতুন সংসার জীবন শুরু হয়। বছর না যেতেই তার কোলে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ঘর আলো করে আসে। পরিবারের আর্থিক অনটনের জন্য এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের এ.এন.পি স্কুলে ৪ বছর চালানোর পর দুই বছর পিপিএস বিদ্যালয় শিক্ষকতায় আবদ্ধ হন।

এরপর এনজিও সংস্থা আশ্রয় ৪ প্লাস শিশুর শিক্ষকতা করেন। এরই মধ্যে সার্বিক কল্যাণে সমাজের ক্ষেত্রে নারী নেত্রী হিসেবে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর বাংলাদেশ নারীনেত্রী প্রশিক্ষণে চারদিন ব্যাপী জয়পুরহাটে টিএমএসএস তে ১৫০তম ব্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তার জীবনের মিল খুঁজে পান। এই প্রশিক্ষণের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশার সুযোগ হয় মানুষকে চেনা এবং তাদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা খুব ভালোভাবে আয়ত্ব করেন নিয়তি রানী। সামাজিক সমস্যার সমাধানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকায় নারীদের সংঘটিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষের নেত্রী হিসেবে তিনি এলাকায় সুপরিচিত। এখন তিনি দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর পুষ্টি উজ্জীবক হিসেবে সমাজ সেবায় স্বেচ্ছাসেবিকার কাজ করে চলেছেন। মানুষদের স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে থাকেন। তিনি বিভিন্ন দিবসে নিজের গ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এলাকার তরুণ এবং বেকার যুবক যুবতীদের আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করে সকলের কাছে নিয়তি দিদি জনপ্রিয় মানুষের পরিণত হয়েছেন।

নিয়তি রাণী মনে করেন মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাধ্যমে, বয়স এখানে মুখ্য বিষয় নয়। অন্যের জীবনের ভরসার পাত্র কয়জনায় বা হতে পারে? যারা সমাজে মানুষের বিপদে- আপদে পাশে দাঁড়ায়, কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ।

(৩) সফল জননী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা প্রতিমা রানীঃ পত্নীতলা উপজেলার পত্নীতলা ইউনিয়নের বোরাম গ্রামের শ্রী সন্তোষ চন্দ্র দাসের স্ত্রী প্রতিমা রানী। বাবা হরেন্দ্র নাথ মন্ডল ও মাতা কাদম্বীনি মন্ডলের ৪ সন্তানের মধ্যে প্রতিমা রানী তৃতীয় সন্তান। বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। তিনবেলা তাদের খাবার জুটতোনা। লেখাপড়া তো দূরের কথা। স্কুলের গন্ডি পেরুনো ভাগ্যে জোটেনি। দৈন্যতার কারণে একেবারেই অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অস্বাভাবিক নির্যাতন আর সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে সদ্য বিয়ের ১ বছরেই মাথায় জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান। এভাবে সুখে দুঃখে খরকুটু দিয়ে সংসার গড়তে গড়তেই ঠিক ৩ বছর পর তাদের আরও একটি পুত্র সন্তানের জন্য হয়। দুই ছেলে ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে কোন রকমে দিন কাটতো তারই মধ্যে তাদের সংসার আলো করে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। হাটি হাটি পা পা করে সংসার এগুতেই শুরু হয় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের চাপ।

অভাবের সংসার চালাতে অর্থের প্রয়োজন পড়লে তিনি পড়ে যান অর্থনৈতিক দৈনদশার মধ্যে। পাশের গ্রাম কাঁটাবাড়ীর এক বাবুর নিকট থেকে কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পাশাপাশি কিছু গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি নানা ধরনের উৎস থেকে ইনকাম দিয়ে কোন রকমে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালাতে থাকেন। আস্তেই সন্তানরা উঁচু ক্লাসে উঠে আর লেখাপড়ার খরচও বেশি হতে থাকে। এদিকে সন্তানেরা ক্লাস ফাইভে ও এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এস.এস.সিতে লেটার মার্ক নিয়ে ফাস্ট ডিভিশনে ফাস্ট হয়। এইদিকে অভাবের সংসার প্রতিবেশি লোকজনদের তিরস্কার, সামাজিক কুসংস্কার, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সবকিছু উপেক্ষা করে নিজের শেষটুকু দিয়ে প্রচেষ্টায় সন্তানদের মেধা ও হার না মানা পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি সত্যিকারের একজন স্বশিক্ষিত মা হিসেবে সমাজে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিমা রানী'র বড় ছেলে স্বপন কুমার দাস এখন সিনিয়র অফিসার জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ছোট ছেলে অনুপ কুমার দাস সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সিনিয়র ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, নাভানা রিয়েল স্টেট লিমিটেড, আর মেয়ে কৃষ্ণাশ্রী দাস সহকারী শিক্ষিকা কাঁটাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সন্তানদের জীবনে ভরসার পাত্র কয়জন মা'ই বা হতে পারে। যারা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু প্রতিমা রানী একজন মহীয়সী মা হিসেবে সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন।

(৪) নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মান্টি রানী দাসঃ পত্নীতলা উপজেলায় নজিপুর পৌরসভা মামুদপুর গ্রামের অসিম কুমার দাস এর মেয়ে মান্টি রানী দাস। বাবা মার প্রথম সন্তান হওয়ায় মান্টি রানী কৈশর কেটেছিল হেঁসে খেলেই। কিন্তু এই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়না। বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে অভাবের কারণে ২০০৮ সালে তাকে বাধ্য হতে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বেশি দিন ভালো থাকা হয়নি তার। নিজের জীবন এবং সংসার সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তার। একে তো বাল্যকালে বিয়ে আবার অকালে সন্তান ধারণ। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর এবং স্বামীর কটু কথা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। বাচ্চা হওয়ার দীর্ঘ ৯ মাস পরে মান্টির স্বামী মান্টিকে নিতে আসে এবং মান্টিকে নিয়ে যায় শ্বশুড় বাড়ীতে। আবারো তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মান্টির শশুর বাড়ির লোকেরা মান্টি ও তার না-বালক সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মান্টির বাবা- মা বাধ্য হয়ে মান্টিকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে ২০২১ সালে তার সংসার জীবনের ইতি ঘটে।

এরপর মান্টি সেলাই মেশিন পরিচালনার কাজ শেখে। বাবার অভাবী সংসার থেকেই কষ্ট করে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করে। সেলাই মেশিনের ক্ষুদ্র আয় থেকে একটি গরু ক্রয় করে। গরু বড় হলে তা বিক্রয় করে একটি ছোট সিট-কাপরের দোকান দেয়। পাশাপাশি মান্টি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাশ করে। কারিগরি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর মান্টি তার যোগত্যা দিয়ে প্রথমত একটি সোলার কোম্পানীতে চাকুরী, দ্বিতীয়ত- বেডো এনজিওতে মাঠকর্মী পদে, তৃতীয়ত-ব্রাক প্রতিষ্ঠানে হেলথ্ স্বাস্থ্য কর্মী পদে চাকুরি করে, চতুর্থ পর্যায়ে- পত্নীতলা উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিডি প্রকল্পতে ট্রেনার পদে কাজ করে, পঞ্চম ধাপে 'কিশোর- কিশোরী' প্রকল্পে আবৃতি শিক্ষক পদে চাকুরী করে ও চলমান। ষষ্ঠ ধাপে আদমশুমারি ও গৃহগণনা কাজে নিয়োজিত ও একইসঙ্গে মান্টি বাড়িতেই পার্লারের কাজ করে।

সামাজের কিছু কুসংস্কার মানুষ তাকে বিভিন্নভাবে অপবাদ দেয়। তাকে হেও করা চেষ্টা করে। তবুও সমাজের অন্য মেয়েদের অনুপ্রেরনা হয়ে আছে মান্টি। যা অন্যান্য মেয়েদের সামনে চলার উৎসাহ প্রদান করে। মান্টি বলেন স্বপ্ন দেখব জেগে থেকে। অন্যকেও দেখাতে উৎসাহিত করব এমন স্বপ্নই বাস্তবায়ন করতে চাই।

(৫) সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সামিমা নাছরিনঃ পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের সামিমা নাছরিন মতিউর রহমান ও নুরজাহান বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। যার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। আর্থিক অবস্থা ভাল না হলেও মায়ের প্রচেষ্টায় নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলেন। 

শামীমা শংকরপুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে দাখিল পাস করেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও সামাজিক চাপে বাধ্য হয়ে শামীমার মা তার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একই গ্রামের মামুনুর রশিদের সাথে ২০০৫ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। সংসার জীবনে প্রায় শশুর শাশুড়ির নানা কথা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যৌতুক হিসেবে টাকা-পয়সা দিতে না পারাই স্বাশুড়ির নির্যাতন এবং অনাহার সহ্য করতে হতো যা দেখে প্রতিবেশীরা খাবার এনে দিয়েছেন। 

অভাবের সংসার সাজাতে অর্থের প্রয়োজনে তিনি ব্রাক প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। স্কুলের শিক্ষকতার সময় ননদের নির্যাতনে বাবার বাড়িতে এসে দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের গ্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা শুরু করেন। এরই মধ্যে সার্বিক সাক্ষরতার আন্দোলন আনসার ভিডিপি গ্রাম উন্নয়ন দলের সভানেত্রী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর মধ্যে প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে। দৈন্যতা দূরীভূত হতে থাকলে স্বামীও শামীমকে গুরুত্ব দিতে থাকেন। এরপর পত্নীতলা উপজেলা আশা ব্যাংক প্রজেক্ট মাঠকর্মী হিসেবে আকবরপুর ইউনিয়নের কার্যক্রম শুরু করেন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সহায়তার মধ্য দিয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিচিতি হয়ে ওঠেন শামিমা। এছাড়াও বসতবাড়িতে সবজি চাষ, কম্পোস্ট তৈরি জৈব সার প্রস্তুত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন শামীমা।

সামাজিক কাজের অংশগ্রহণ এর সুবাদে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নানা শ্রেণী পেশা মানুষের সাথে মিশা সুযোগ হয়। যখনই তিনি বাড়িতে আসেন গ্রামের মানুষ অভাব অভিযোগ তাকে ব্যতীত করে তোলে। 

২০১৪ সালে গণ গবেষণা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৩০ জন নারীকে নিয়ে সামিমা গড়ে তোলেন মুষ্টির চাল সমিতি। তিনি এখন এই সমতির সভাপতি এলাকার কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলে নিজে গিয়ে তাকে ডাক্তার দেখান। কিংবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা মীমাংসা, অসহায় পরিবারকে আইন সহায়তা, গ্রামের স্যানিটেশন ব্যবস্থা শততাগ উন্নতি করন, সকল শিশু বিদ্যালয় ভর্তি নিশ্চিত করন, গর্ভবতী ও পুষ্টি মায়ের পরিচর্যা করা, বিচার সালিশে মেয়েদের মতামতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার মতো কাজ গুলো তিনি করে থাকেন।২০১৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের গণ গবেষণা ফোরাম নির্বাচিত হলে তিনি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের নারী নেত্রী হিসেবে ইউনিয়ন কমিটির কেশিয়ার ও জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। উপজেলা প্রতিবন্ধী কমিটির সদস্যও তিনি। এতাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

পরিবারের অন্যদের আস্থা অর্জন করে আজ সবার মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন শামীমা। পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এখন প্রধান ভূমিকা পালন করেন। মানুষের আত্মশক্তিকে জাগিয়ে দিতে পারে সেই অজয়কে সহজে জয় করতে পারে শামীমা। আর কোন বাধাই তার চলার পথকে রুখতে পারেম না। পরিবর্তনশীন সমাজ সম্পর্কে শামীমার ভাবনা পরিষ্কার। তিনি সবার আগে নিজের মানসিকতা পাল্টিয়েছেন। আর সমাজ পরিবর্তনে ধনী-দরিদ্র কিংবা নারী পুরুষ আলাদা না রেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেওয়া এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি সমাজের শিক্ষিত ও জন প্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তাহলেই কেবল সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।

আরও খবর